প্রসঙ্গঃ দিল্লী নির্বাচন
সুশোভন
খিচুড়ি ও সাফল্য
নিজরাজ্য পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত এক রাজা মন্ত্রী-পারিষদ-সেনাবাহিনী-অর্থ-সম্মান সর্বস্ব হারিয়ে গভীর অরণ্যে আশ্রয় নিলেন এক হত দরিদ্র বুড়িমার নির্জন কুটীরে। অতিথি পরায়ণ বুড়িমা রাজাকে নিজের সামান্য সাধ্যমত খিচুড়ি ফুটিয়ে খেতে দিলেন। ক্ষুধার্ত রাজা, শুরুতেই গরম খিচুড়ির মাঝে হাত দিয়ে বসলেন এবং হাত পোড়ালেন। তা দেখে বুড়িমা রাজাকে বলেছিলেন “এই জন্যই তুই যুদ্ধে শত্রু পক্ষের কাছে পরাজিত হয়েছিস। খিচুড়ি খাবার আর যুদ্ধের নিয়ম একই। প্রান্ত থেকে শুরু করে মূল লক্ষে পৌঁছাতে পারলেই একমাত্র জয়লাভ সম্ভব।” বুড়িমার যখন রাজাকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন তখন সেখানে অরবিন্দ কেজরিওয়াল উপস্থিত ছিলেন এমন কোন অলৌকিক তথ্য প্রমাণ নেই, কিন্তু দিল্লীতে তার দল যেটা করে দেখাল, সেটা পেট্রিক গিডিসের “Think Globally, act locally” শব্দবন্ধের সাফল্যের সাম্প্রতিকতম উদাহরণ বললে স্বয়ং ওই স্কটিশ সমাজকর্মী খুশিই হতেন। আর তাই খোদ রাজধানীর বুকে আপাত আনকোরা এক ‘আঞ্চলিক রাজনৈতিক’ দলের কল্পনাতীত সাফল্য নিয়ে দেশে-বিদেশে শুরু হয়েছে বিস্তর চর্চা। ৭০ এ ৬৭, অঙ্ক পরীক্ষায় কোনও মেধাবী ছাত্র ছাত্রীর রিপোর্ট কার্ডের মত ঝা-চকচকে এই চোখ ধাঁধানো সাফল্য আদপে কোনও বিশেষ একটি কারণে সীমাবদ্ধ রাখাও সম্ভব নয়। আর তাই এই সাফল্যকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে কাটা-ছেঁড়া করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আতস কাঁচে উঠে আসছে একাধিক কারণ, বহুমাত্রিক দৃষ্টিকোণ।
ইতিহাসে পাতিহাস
২০১১-র শেষের দিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্না হাজারের লড়াই আন্দোলন এবং সাধারণ মানুষের গণজাগরণ শক্তিশালী রাষ্ট্র ব্যবস্থার শিকড়ে একটা প্রবল ঝাঁকুনি দিতে সক্ষম হয়েছিল। একদিকে যেমন স্বাধীন ভারতবর্ষের বার্ধক্যকালীন নির্বাচনী প্রচারে ‘দুর্নীতি’ কেন্দ্রীয় ইস্যু হয়ে ওঠা মোটেও আহ্লাদিত হওয়ার অবকাশ দেয় না, ঠিক তেমনই শুধুমাত্র অনশন ও স্বতঃস্ফূর্ত গণ আন্দোলনের হাতিয়ারে এই জং ধরা রাষ্ট্রযন্ত্র কে গতিশীল করাও সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, আদর্শগত অবস্থান ও দূরদর্শিতা, বিকল্প অভিমুখ এবং অবশ্যই রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহন। এখানেই ‘ইন্ডিয়া অ্যাগেনস্ট করাপশনের‘ এর সাফল্যের পরও আপের উত্থান ছিল অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক। আপের উত্থানের পরবর্তী সময় সচেতন মহল এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আপের রাজনৈতিক চরিত্র ব্যাখা করতে গিয়ে যতই “চমকসর্বস্ব”, “অতি বাম”, “প্রগতিশীল বাম”,“র্যা ডিকেল”, “রাজনীতি বিদ্বেষী” বহুবিধ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন ততই দিল্লীর রাস্তা-ঘাটে, অলিতে-গলিতে সাধারন মানুষের মনে, চায়ের কাপে, অফিসের আড্ডায়, পাড়ার ঠেকে, বাসে-ট্রামে-অটোরিকশায় এমনকি টেকসেভি নতুন প্রজন্মের কাছে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আপের গ্রহণযোগ্যতা। অতঃপর সবাইকে চমকে দিয়ে ২০১৩ ডিসেম্বরের দিল্লী নির্বাচনে প্রথমবারের জন্য আপ পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের রাজধানীতে আত্মপ্রকাশ করে। কংগ্রেসের সমর্থন পুষ্ট আপের সরকার চালানো অবশ্য পরবর্তী সময় সহজ হয়নি। বিভিন্ন বিতর্কের মধ্যেই প্রতিশ্রুতিমতো কংগ্রেস এবং বিজেপি’র বিরোধিতার জন্য “জনলোকপাল বিল” পাস করাতে ব্যর্থ হয়ে আপ, ৪৯ দিনের মাথায় সরকার ভেঙ্গে দেয়।
পাঁচসাল…কেজরিওয়াল এবং পরিসংখ্যান
অল্প সময়ে সরকার ভেঙ্গে দেওয়ার মাশুল গুনতে হয় আপকে। খোদ দিল্লীর বুকে ৭টি লোকসভা আসনেই আপ মুখ থুবড়ে পড়ে ২০১৪-তে। কিন্তু ২০১৫-র সাধারণ নির্বাচনের শুরুতেই যখন মিডিয়ার আপাত ফেভারিট বিজেপি’র, লোকসভা নির্বাচনের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ রাজনীতির অঙ্ক কষছেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ১০ লক্ষ টাকার সোনার কাজ করা নিজের নামাঙ্কিত জ্যাকেট পরে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরের জনসভা করতে প্রাইভেট চপারে পাড়ি দিয়েছেন, রায়বাহাদুরের আশায় আমেরিকার বড়লাটের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে দিল্লী ছেয়ে গেছে সি সি টি ভি ক্যামেরায়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্যা যখন নির্বাচনী জনসভায় ‘রামজাদা’ আর ‘হারামজাদা’র সরল সমীকরণ আবিষ্কার করেছেন, ৩০ বছর পর যখন দিল্লীর সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ত্রিলোকপুরিতে প্রথমবার দাঙ্গা হয়েছে, বসন্তকুঞ্জে যখন চার্চ পোড়ানো হয়েছে, ঠিক তখনই অরবিন্দ কেজরিওয়াল ফিরে গেছেন দিল্লীর বস্তিতে,অলিতে-গলিতে। আক্ষরিক অর্থেই হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েছেন পূর্বতন সরকার ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য। মাটি কামড়ে পড়ে থেকে সংগঠন শক্তিশালী করেছেন। চাকচিক্য নয়, বলেছেন সাদামাটা “রোটি-কাপড়া-মাকানে”-র কথা। বিকল্প অভিমুখে, ভোটের পর সস্তায় জল, ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারে ৫০ % ভর্তুকি , বেসরকারি বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠানদের অডিট, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা, এবং বেশকিছু ক্ষেত্রে কন্ট্র্যাক্ট চাকরিকে স্থায়ী চাকরিতে পরিণতের কথা। ধর্মীয় বিভাজনের রাজনৈতিক চিরাচরিত লাইন ছেড়ে মিশে গেছেন সাধারন মানুষের একজন হয়ে। এর সাথে কেজরিওয়ালের সৎ ভাবমূর্তি, প্রত্যেক বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য আলাদা আলাদা নির্বাচনী ইশতেহার, প্রচারে সোশাল নেটওয়ার্কের বুদ্ধীদীপ্ত ব্যবহার ও তরুণ সমাজের সার্বিক অংশগ্রহণে দিল্লী জয়ের আপাত নিরীহ অঙ্ক কষে, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের ৩২.৯%-র থেকে রাজনীতির সমস্ত সমীকরণ বদলে দিয়ে ৯ মাসের মধ্যে ৫৪.৩% নির্বাচক মণ্ডলীর সমর্থন আদায় করেছেন। আপ সমাজের সবস্তর থেকেই ভোট পেয়েছে৷ কিন্তু অবশ্যই, বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হল সমাজের নীচের তলার মানুষের ভোট, দলিতদের ভোট, মুসলিমদের ভোট। আর তাই প্রকৃত অর্থেই সার্বিক ও বহুমাত্রিক এই ‘AK-67’-র সাফল্য।
শূন্যের পুনঃ আবিষ্কার
দিল্লী নির্বাচন যে ক্রমশ দ্বি-মুখী লড়াইয়ে পর্যবসিত হচ্ছিল প্রচার পর্ব থেকেই তা আঁচ করতে রাজনৈতিক পণ্ডিত হবার প্রয়োজন ছিল না। আজয় মাকেনের নেতৃত্বে খোদ দশ জনপথের ধারে-পাশেও দিশহীন কংগ্রেসকে খুঁজতে রীতিমত অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দরকার পড়ছিল। শোনা যায়, রাজীব গান্ধীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে সনিয়া গান্ধীর মা কন্যাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন পুত্র-কন্যা নিয়ে ইতালিতেই পাকাপাকি ভাবে চলে যাওয়ার৷ সোনিয়া সে যাত্রায় মায়ের পরামর্শে কান তো দেননি বরং ‘বিদেশিনী’র তকমা ঝেড়ে ফেলে নির্বাচনী বিপর্যয় থেকে তুলে এনে দিল্লীর মসনদে উল্লেখযোগ্য দক্ষতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন কংগ্রেসকে। তবে হালফিলের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে পরামর্শটি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতেই পারেন সনিয়া৷ অন্তত পুত্র রাহুলকে তিনি কোনও নিরাপদ স্থানে চালান করে দেওয়ার কথা তো কমপক্ষে ভাবতেই পারেন৷ গাধা পিটিয়ে ঘোড়া আদপে হবে কিনা সে সন্দেহ থেকে গেলেও, যে অসামান্য দক্ষতায় “শাহাজাদা” বেদ-পুরানের বধ্যভুমিতে পুনঃরায় “শূন্য” আবিষ্কার করলেন তা দেখলে বোধহয় স্বয়ং আর্যভট্টও লজ্জা পেতেন।
আবকি বার… ঝাড়ু মার
সাধারন নির্বাচনের প্রায় ৯-১০ মাস পর ‘সুদিনে’র গপ্পো বলার সরকার তাঁদের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী প্রচার ও প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে।এর সাথে যুক্ত হয়েছে একাধিক জনবিরোধী নীতি প্রণয়ন। সবমিলিয়ে সুদিনের স্বাদ তেতো লাগছে এমন বলার সময় যেমন আসেনি তেমন এই সুদিনের অভিমুখ যে আদপে পূর্বতন সরকারের তুলনায় ভিন্ন নয় তা সাধারণ মানুষের কাছে ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যে কেন্দ্রে ক্ষমতাশীল দলের নির্বাচনী সাফল্য আসছে বটে কিন্তু দৃষ্টিকটূভাবে কমছে ভোট শতাংশ। এমত অবস্থায় দিল্লীর নির্বাচনের বিষয়ে একাধিক কারণই বিশেষ আত্মবিশ্বাসী ছিল না শাসক দল। উপরন্তু দিল্লীতে বিজেপি –র একাধিক গোষ্ঠী সক্রিয়। হর্ষ বর্ধন এবং সতীশ উপাধ্যায়ের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব এড়াতেই অমিত শাহ কিরণ বেদী কে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ততে অস্বস্তি কমেনি বরং বেড়েছে। কিরণ বেদী কে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণার পরেরদিনই নজিরবিহীন বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। পরবর্তী সময়ে নির্বাচনী প্রচারে কিরণ বেদীর একাধিক আলগা মন্তব্য আসলে বিজেপি’র এই চমক সর্বস্ব সিদ্ধান্তকে বুমেরাং হিসেবেই ফিরিয়ে দেয় গেরুয়া শিবিরে। রাজধানী দখল করতে আক্ষরিক অর্থেই সর্বস্ব পণ করে নেমেছিল বিজেপি৷ জলের মতো অর্থ-ব্যয় তো ছিলই, শহরের প্রতিটি নুক্কড় গলিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল শয়ে শয়ে সাংসদ আর ভারি ভারি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের৷ সঙ্গে সমানে সঙ্গত করেছিল শৃঙ্খলাপরায়ণ স্বয়ংসেবকের দল৷ লোকসভা থেকে কাশ্মীর, প্রতিটি নির্বাচনে সাফল্যের স্ক্রিপ্ট অনুসারে প্রচারের প্রধান ও প্রায় একমাত্র মুখ হিসেবে এগিয়ে এসেছিলেন নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী৷ তাই বিজেপি নেতৃত্ব এখন ঠেলায় পড়ে যতই অস্বীকার করুন না কেন, তাঁরাই এই সামান্য বিধানসভা ভোটকে মোদী বনাম কেজরিওয়ালের লড়াইয়ের চেহারা দিতে চেয়েছিলেন৷ মিলল না কোনও অঙ্ক৷ সফল হল না পরীক্ষিত স্ট্র্যাটেজি৷ লোকসভা নির্বাচনের ৪৬.৪০% ভোট শতাংশ একধাক্কায় নেমে এলো ৩২.২%। আম -আদমি নিশ্চিহ্ন করে দিল প্রবল পরাক্রমশালী রাম -ভক্তদের৷
পথেই এবার নামো সাথী …
১৯৯১ সালে অর্থমন্ত্রী মনোমোহন সিং উদার অর্থনীতির রূপরেখা প্রকাশ করে বলেছিলেন, “সরকার নিশ্চিত এই পদক্ষেপ প্রথমে কঠিন মনে হলেও অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচী অচিরেই আর্থিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আনতে সক্ষম হবে। সামাজিক সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে। সম্পদ সৃষ্টির জন্য সামাজিক প্রকল্পে ব্যয় সংকোচের পথে হেঁটে সাধারন মানুষের সার্বিক জীবনযাপনের পথে বাধা সরিয়ে পাঁচ বছর পর দেশে আর গরীব থাকবে না।”১৯৯১ থেকে আজ ২০১৫, বিগত ২৫ বছর ধরে উন্নয়নের যে আদিকল্প আমাদের সামনে হাজির করা হয়েছে, তাতে একটা গোটা প্রজন্ম বড়ো হল, ভারতবর্ষ ‘আর্থিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীল না গতিশীল, সামাজিক সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে না মাঝ রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে, সামাজিক প্রকল্পে ব্যয় সংকোচ করে দেশের কত গ্যালন গ্যালন সম্পদ তৈরি হয়েছে, আর সেই গ্যালন গ্যালন সম্পদে সাধারন মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন হয়েছে না পুরোটাই গিয়েছে একটি ক্ষুদ্র, উচ্চবিত্ত -উচ্চ মধ্যবিত্ত জোটের পাতে, গরীব আছে, না গরীব খুঁজতে ‘মিউজিয়ামে’ যেতে হচ্ছে, ‘মঙ্গালয়ন’ করতে হচ্ছে, এই সব প্রশ্নের উত্তর আপনার শুভবুদ্ধির উপর ছেড়ে দিয়েই বলি, আপের সাফ্যলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অর্থনীতির বা রাষ্ট্র পরিচালনার বিকল্প অভিমুখ। যা বামপন্থীরা দীর্ঘ দিন বলার চেষ্টা করলেও বিভিন্ন কারণে একাধিক বার মুখ থুবড়ে পড়েছে জাতীয় রাজনীতির পরিসরে। আপ দিল্লীর বুকে তা বলে সমর্থন আদায় করতে পেরেছে। কিন্তু ‘আপ ’-এর নেতারা বলছেন, তাঁদের দলের কোনও মতাদর্শ নেই, তাঁরা বাম -ডান কিছু না , তাঁরা ভারতের পক্ষে (‘pro-India’), তাঁদের লড়াই হবে ইস্যু ভিত্তিক। কিন্তু ভারতবর্ষের এই কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের সমীকরণে শুধু “ইস্যু” ভিত্তিক লড়াইয়ের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাধারণ মানুষের সার্বিক সমস্যা সমাধানের পথে বিকল্প অভিমুখ নেওয়া আদেও সম্ভব কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্টই সন্দেহ আছে। ২০১৪ সাধারন নির্বাচনে ভারতবর্ষব্যাপী আপের নিতান্তই সাদামাটা ফল তারই সাক্ষ্য বহন করে। আবার নির্দিষ্ট মতাদর্শ ছাড়া যে কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যাক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যা বাস্তবে দল এবং গণতন্ত্র উভয়ের পক্ষেই বিপদজনক। মনে রাখা প্রয়োজন, অনেক প্রাদেশিক ইস্যুর সাথ সাথে আপ কিন্তু মুক্তকণ্ঠে হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েতেরও বিরোধিতা করতে পারেনি, সোমনাথ ভারতী-দেরও বর্জন করতে পারেনি। ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধাচরণ, দলীয় শৃঙ্খলা ও অনুশাসন হারিয়ে ফেলার উদাহরণ ভারতীয় রাজনীতিতে নিতান্তই কম নেই। তাই “ধরি মাছ না ছুই পানি” তে বেশিদিন “চিঁড়ে ভিজবে না”, সতেরও মা অসতেরও মা পন্থাতে সমস্যার মৌলিক সমাধানও হবে না, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জনমুখী ও কাঙ্খিত পরিবর্তন এনেই, নেতা নয় নীতির পরিবর্তন করেই, বিকল্প অভিমুখে সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে এবার আবার আপকে পথে নামতে হবে। আর তখনই মুক্তকণ্ঠে বলব… পথেই এবার নামো সাথী পথেই হবে পথ চেনা…