রক্তিম মিত্র
মাত্র কয়েক মাস আগের কথা। পুরভোটে উত্তরবঙ্গের দুটি জায়গায় দারুণ জয় পেল বামফ্রন্ট। একটি শিলিগুড়িতে। অন্যটি দিনহাটায়। দুটি ক্ষেত্রেই ক্ষমতায় এলে কে পুরপ্রধান হবেন, আগাম ঘোষণা করে লড়াইয়ে নেমেছিল বামফ্রন্ট। দুটি ক্ষেত্রেই বেশ সফল। শিলিগুড়িতে যদিও এক নির্দল প্রার্থীর সমর্থন দরকার হয়েছিল। কিন্তু দিনহাটায় ১৬ টির মধ্যে ১৩ টি আসনে জিতেছিল বামফ্রন্ট।
এমন নির্বাচনী সাফল্যের পর কি মাথা ঘুরে গেল উদয়ন গুহ-র ? গত কয়েকদিনে তাঁর গতিবিধি দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে। তাঁর লক্ষ্য এখন বর্ষীয়াণ নেতা অশোক ঘোষ! আর লড়াইয়ের জন্য বেছে নিয়েছেন ফেসবুককে!
এই এক সপ্তাহে তাঁর ফেসবুক পেজের কদর নিশ্চিতভাবেই অনেক বেড়ে গেছে। জন্মদিনের পর অশোক ঘোষকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। উদয়নবাবু সেই রাতেই লিখে ফেললেন, ‘নেতারাই পতনের পথ দেখান।’ এবার ফরওয়ার্ড ব্লক দপ্তরে ইফতার। হাজির হয়ে গেলেন তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান। সেই রাতে উদয়নবাবু আবার লিখে ফেললেন, অফস্টাম্প কোথায় আছে, বুঝতে না পারলে তার খেলা ছেড়ে দেওয়া উচিত। গাভাসকার, তেন্ডুলকাররা সেটাই করে দেখিয়েছেন।’
ইঙ্গিতটা কার দিকে, যাঁরা রাজনীতি নিয়ে সামান্য খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা বেশ বুঝতে পারছেন। মুখ্যমন্ত্রী যদি জন্মদিনে আসতে চান, অশোকবাবু কি করতে পারেন ? উনি বয়স্ক মানুষ। বিরোধী নেত্রীর প্রতি স্নেহপরায়ণ হয়ে হয়ত একটু বেশিই প্রশ্ংসা করেছেন। তা নিয়ে দলের মধ্যে বিতর্ক হতে পারত। তাই বলে এই ভাষায় আক্রমণ ? ইফতারের দিন যদি ইমরান চলে আসেন, তিনি কি অতিথিকে বের করে দেবেন ? যতদূর শোনা যায়, মমতার সঙ্গে আসা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এর বাইরে অশোকবাবু আলাদা করে কাউকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কিনা জানা নেই। খুব সচেতনভাবে তিনি ইমরানকে ফোন করেছেন, এমনটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মিডিয়া স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা হইচই করবে। কিন্তু এটা হইচই করার তেমন বিষয় নয়। অন্তত এর জন্য প্রকাশ্যে অশোক ঘোষকে এভাবে হেনস্থা করতে হবে, এত বড় বিষয় তো নয়ই।
অশোক ঘোষের বয়স হয়েছে। প্রায় দুই দশক তিনি চোখে দেখতে পান না। তবু, এখনও সবচেয়ে দায়িত্বশীল বামপন্থী নেতাদের মধ্যে তাঁর নাম উঠে আসে। সবচেয়ে মার্জিত শব্দচয়ন এখনও ওই ৯৪ বছরের মানুষটার মুখ থেকেই বেরিয়ে আসে। বাম আন্দোলনে তাঁর ত্যাগ ও বিশ্বাসযোগ্যতা সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। তাঁকে ঘিরে কোনওদিন কোনও গুঞ্জন তৈরি হয়নি, হবেও না। কিন্তু আপনি যে ‘‘উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে’’ সামিল হবেন না, এমনটা জোর দিয়ে বলা খুব কঠিন। কোনদিন তৃণমূল ভবনে তাঁর হাতে পতাকা তুলে দেওয়া হবে, কে জানে! নিশ্চিত থাকতে পারেন, উদয়নবাবু এমন মন্তব্য করার পরেও অশোকবাবুর মুখ থেকে উদয়নবাবু সম্পর্কে একটিও খারাপ কথা বেরোবে না।
অফস্টাম্প কোথায় আছে, অশোকবাবু জানেন। এই চুরানব্বই বছরেও জানেন। জানেন, কোন বলটা কীভাবে ছাড়তে হয়।
আর তুলনায় অনেক নবীন উদয়নবাবু অফস্টাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া সেই বলে ব্যাট চালিয়ে ব্যাটের কানায় লাগাচ্ছেন। স্লিপে ক্যাচ তুলছেন।
উদয়নবাবু, অফস্টাম্পটা কোথায়, আপনি বরং ভাল করে জেনে নিন।