কেন দল ছাড়লেন? কোথায় সমস্যা হচ্ছিল? বিজেপি-কে ঘিরে কী প্রত্যাশা ? সরাসরি জানালেন লকেট চট্টোপাধ্যায়।।
অনেকেই প্রশ্ন করছে, হঠাৎ করে কেন দল ছাড়লাম। কোনওকিছুই হঠাৎ করে হয় না। তৃণমূলে আসাটাও হঠাৎ ছিল না। তাই সেই দল ছেড়ে আসাটাও হঠাৎ করে নয়। অনেকদিন ধরেই মোহভঙ্গ ঘটছিল। একটু একটু করে বিরক্তি বাড়ছিল। দলের ভেতর কাউকে বলব, সেই উপায়ও ছিল না। কারণ, বিরুদ্ধ কোনও মত শোনার রেওয়াজ নেই। একটা সময় দম বন্ধ হয়ে আসছিল। মনে হল, অনেক হয়েছে। এবার একটু সাহস করে নিজের মনের কথাটা বলা যাক। তাই এই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত।
কোনও সন্দেহ নেই, অনেক প্রত্যাশা নিয়েই তৃণমূলে এসেছিলাম। সেই প্রত্যাশাটা ব্যক্তিগত নয়। রাজ্যটা একটু ভালভাবে চলবে, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কিছুটা উন্নত হবে, একটু সুস্থ, সুন্দর পরিবেশ গড়ে উঠবে, এমনটাই চেয়েছিলাম। আমাকে মহিলা কমিশনের সদস্য করা হল। মনে হয়েছিল, এখানে থেকেও কিছুটা কাজ করার সুযোগ থাকবে। অন্তত আক্রান্ত মহিলাদের পাশে থাকতে পারব। যেখানে প্রশাসন নির্বিকার, সেখানে অন্তত আমরা কিছুটা ভূমিকা নিতে পারব। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা মোটেই ভাল নয়। নানা জায়গায় ছুটে গেছি। শুটিং থামিয়েও গেছি। পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বারবার দেখলাম, কোথাও একটা থমকে যাচ্ছে। একের পর এক খারাপ ঘটনা ঘটছে, প্রশাসন সেটাকেই জাস্টিফাই করছে। নিজেদের দোষ অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা। রোজ মনে হচ্ছিল, জনতার রায়ের থেকে এটা কোথাও একটা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। যেগুলোকে ছোট ঘটনা বলা হচ্ছে, সেটা আদৌ ছোট ঘটনা নয়।
একটা বড় কারণ সারদা। এই কেলেঙ্কারির জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। এত মানুষের কান্না, এত মানুষের দীর্ঘশ্বাস, সেটাকে কখনও সমর্থন করা যায় ? রাজ্যের মানুষ বিশ্বাস করেছে, এর সঙ্গে শাসক দল জড়িয়ে আছে। অভিনয়ের সূত্রে বা নানা কারণে যেখানেই গেছি, মানুষ প্রশ্ন করেছেন, দিদি, এটা কী হচ্ছে ? মানুষকে কোনও জবাব দিতে পারিনি। আমাদেরকে মানুষ বিশ্বাস করছিল না। হয়ত মনে করত, কী জানি, এও জড়িয়ে নেই তো! আমরা নিজেরাও নিজেদের বিশ্বাস করতে পারতাম না। আমার পাশের লোকটাও ভাবছে, লকেটের সঙ্গে কার যোগাযোগ আছে। আমরা অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত নই। কিন্তু আমাদেরকেও এর জবাব দিতে হয়। অন্যেরা কেলেঙ্কারি করবে, আমরা কেন তার ভাগীদার হব ?
অনেকে বলতেই পারেন, বিজেপি-তে কেন ? আমি রাজনীতি খুব ভাল বুঝি, এমন দাবি করব না। কিন্তু কেন জানি না, মনে হচ্ছে, এখানে কাজ করার একটা পরিবেশ আছে। এখানে গুণী মানুষদের সম্মান আছে। সহিষ্ণুতা আছে। এমনকি দলের কোনও কাজ পছন্দ না হলে সেটাও অন্তত দলের ভেতর বলা যাবে। এই দলটা যেভাবে কাজ করতে চাইছে, আর আমরা যেভাবে কাজ করতে চাই, তার মধ্যে কোথাও একটা মিল আছে।
এসব ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। আবার বলছি, কোনও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে আসিনি। আপনাদের পাশে থেকেই কিছু কাজ করতে এসেছি। সবার শুভেচ্ছা যেমন পেয়েছি, আশা করি আগামীদিনেও তা থেকে বঞ্চিত হব না।