স্বরূপ গোস্বামী
আমাদের স্পিকার মশাইয়ের খুব গোঁসা হয়েছে। তাঁর উপর আস্থা না রেখে কেন হাইকোর্টে যাওয়া হল।
বিষয়টি দলত্যাগ নিয়ে। আগের টার্মেও বাম থেকে, কংগ্রেস থেকে দলে দলে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তৃণমূল ভবনে ‘উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে’ এক এক করে সবাইকে সামিল করা হয়েছে। কারও ক্ষেত্রেই স্পিকার মশাই কোনও ব্যবস্থা নেননি। এই কেনাবেচায় তিনি ছিলেন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের মতোই। বরং, যাঁরা এক দলের প্রতীকে জিতে অন্য দলে নাম লিখিয়েছেন, তাঁরা বেশ ভালমতোই জানতেন, এমন স্পিকার থাকলে আইন মানার কোনও দরকার নেই। সবাই বুঝে গেছেন, এই স্পিকারের মধ্যে নিরপেক্ষতার ছিটেফোটাও নেই। এমনকি স্পিকারের চেয়ারে বসতে হলে যে ন্যূনতম ব্যক্তিত্ব দরকার, তাও নেই।
নতুন বিধানসভাতেও সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে। শুরু হয়েছিল তুষার ভট্টাচার্য আর দীপালি বিশ্বাসকে দিয়ে। সেই সংখ্যাটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। রেজিনগরের রবিউল ইসলাম, ইসলামপুরের কানহাইয়ালাল আগরওয়াল, ইংলিশবাজারের নীরাহ ঘোষ, সবংয়ের মানস ভুঁইয়ারা তো প্রকাশ্যেই যোগ দিয়েছেন। তলায় তলায় আরও কিছু নাম শোনা যাচ্ছে। নীহার ঘোষের ক্ষেত্রে তবু আইনে ছাড় আছে। তিনি নির্দল বিধায়ক, আইনত কোনও দলে যেতে বাধাস নেই। কিন্তু বাকিরা ? তাঁদের ক্ষেত্রে স্পিকার কি ব্যবস্থা নিয়েছেন ? নিতে পারবেন, এমন ভরসাও নেই।
আগের বিধানসভার কথায় আসুন। সৌমিত্র খাঁ, দশরথ তিরকে, সুনীল মণ্ডলরা দল বদল করে লোকসভায় দাড়িয়েছিলেন। তাঁদের পদত্যাগ করতেই হত। কৃষ্ণেন্দু চৌধুরি, হুমায়ুন কবীর মন্ত্রী হয়ে নতুন করে দাঁড়িয়েছিলেন। আরও দুজন অন্তত পদত্যাগ করার সৎসাহস দেখিয়েছেন, তাঁরা হলেন অজয় দে ও অনন্ত দেব অধিকারী। কিন্তু বাকিকা ? উদয়ন গুহ থেকে বুলচিক বারিক, রবি চ্যাটার্জি থেকে গোলাম রব্বানি, আবু নাসের খান থেকে তাজমুক হক, ছায়া দোলুই থেকে অসিত মাল – এঁরা দিব্যি বিধায়ক থেকে গেছেন। ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, নোটিশটুকুও ধরাতে পারেননি। রানিগঞ্জের সোহরাব হোসেন। নিম্ন আদালতে সাজা হল। সু্প্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, সঙ্গে সঙ্গে সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাওয়ার কথা। আপনি বলে গেলেন, কোর্টের নির্দেশ পাইনি। বিরোধী এক বিধায়ক কোর্টের নির্দেশ আপনাকে জমা দিলেন। আপনি তা সত্বেও নির্বিকার। লোহা চোরের প্রতি আপনার অবাধ প্রশ্রয়ে মেয়াদটা দিব্যি ফুরিয়ে গেল।
এবার আপনিই বলুন, আপনার উপর ভরসা রাখা যায় ?
বিধানসভার ভেতরে আপনার অসহায়তা আর নির্লজ্জ চাটুকারিতার কথা লিখতে গেলে সে এক দীর্ঘ লেখা হয়ে যায়। সে প্রসঙ্গ বরং থাক। শুধু দলত্যাগের কথাই তুলে ধরা হল। আগের দফা এবং এই দফা। কোনও ব্যবস্থাই নিতে পারেননি। পারবেনও না।
হ্যাঁ, হাইকোর্টে যাওয়া ছাড়া সত্যিই আর কোনও উপায় ছিল না। সেই রাস্তাটা আপনিই দেখিয়েছেন। হাইকোর্ট বিধানসভার অধ্যক্ষকে তিরস্কার করছে, এই ঘটনা এই বাংলায় আগে ঘটেনি। আপনার কল্যাণে এবার সেটা ঘটতে চলেছে।
Hats off !!
Aptly lashed out to this Nonsense.
Thanks
Satrajit