রাহুল বিশ্বাস
গত কয়েকমাসে অনেক বাম কর্মী-নেতার মুখেই তাড়া করছে প্রশ্নটা। কংগ্রেসের সঙ্গে কি জোট হবে ? বাসে, রাস্তায়, চায়ের আড্ডায় যে মনোভাব টের পেয়েছি, তা হল, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা উচিত। দরকার হলে মালদা, মুর্শিদাবাদ ও উত্তরবঙ্গের কিছু ভাল আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া উচিত। যেভাবেই হোক, তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট যেন না হয়।
কিন্তু সহজ সত্যিটা হল, জোট হবে কি হবে না, তা সিপিএমের ইচ্ছের উপর নির্ভর করবে না। সিপিএমের সামনে রয়েছে নানা বাধ্যবাধকতা। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই ভোট হবে কেরলে। সেখানে তৃণমূল বলে কিছু নেই। সেখানে মূল লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গেই। কেরলে কংগ্রেসকে হারানোর জন্য লড়ব, আর বাংলায় কংগ্রেসের হাত ধরে হাঁটব, একইসঙ্গে দু জায়গায় দুরকম নীতি নিয়ে চলতে হবে। নানা প্রশ্নেই মুখোমুখি হতে হবে, যার সন্তোষজনক উত্তর নেই।
শরিকদের একটা বড় অংশের বাধা আসবে। ফরওয়ার্ড ব্লক বা আর এস পি কতটা মানবে, সন্দেহ আছে। যদি ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’র কারণ দেখিয়ে মেনেও নেয়, এস ইউ সি নিশ্চিতভাবে বেঁকে বসবে। সেক্ষেত্রে এস ইউ সি-কে পাশে পাওয়াটাও কঠিন হবে।
সহজ কথা, কংগ্রেস কী চাইবে? রাজ্য কংগ্রেসের কোন নেতা কী চাইলেন, তার বিশেষ গুরুত্ব নেই। সোনিয়া গান্ধী বা রাহুল গান্ধী কী চাইলেন, সেটাই আসল কথা। কাদের সঙ্গে জোট হলে তাঁদের সুবিধা, সেটা তাঁরা ভাল করে বুঝে নিতে চাইবেন। এবং সেটা রাজ্যের দিকে তাকিয়ে নয়, কেন্দ্রের সমীকরণের কথা মাথায় রেখে।
কংগ্রেস খুব ভালভাবেই জানে, বামপন্থীরা কখনই বিজেপির দিকে যাবে না। কিন্তু মমতাকে বিজেপির দিকে ঠেলে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। পরিসংখ্যান বলছেন, লোকসভায় তৃণমূলের ৩৪ জন ও রাজ্যসভায় ১২ জন সাংসদ। এই ৪৬ জন এম পি-র সমর্থন রয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে। বাংলায় কয়েকটা বেশি আসন পাওয়ার জন্য এই ৪৬ এর হাতছানি ত্যাগ করবেন সোনিয়া ? বামেদের সঙ্গে জোট বাঁধলে মমতার সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়বে, যা চাইবেন না সোনিয়া গান্ধী।
তাই বামেদের যেমন বাধ্যবাধকতা আছে, কংগ্রেসের কাছেও নানা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাজ্য নয়, সেখানে প্রাধান্য পাবে কেন্দ্রের নানা সমীকরণ। সেক্ষেত্রে তাঁদের অবস্থানে দাঁড়িয়ে যদি জোট করতেই হয়, তৃণমূলের সঙ্গে করাটাই বাস্তবসম্মত। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের কোন কর্মী তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হলেন, থানা এফ আউ আর নিল কিনা, এটা ভাবার দায় রাহুল গান্ধীর নেই।
তাই, সিপিএম নেতৃত্ব জোটের পক্ষে বিপক্ষে যতই বিতর্ক করুন, জোট হওয়া-না হওয়া নির্ভর করছে কংগ্রেসের উপর। এবং এই মুহূর্তে কংগ্রেসের কাছে ভাল বিকল্প অবশ্যই তৃণমূল। এই সহজ সত্যিটা মেনে নিন। আর তাই জোট নিয়ে অহেতুক এত বিতর্ক করে নিজেদের শক্তিক্ষয় করবেন না। তার থেকে নিজেদের সংগঠনকে কী করে শক্তিশালী করা যায়, সেদিকে মন দিন।