রক্তিম মিত্র
বেশ ঘটা করে প্রেস কনফারেন্স করলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। পাশে বসেছিলেন কলকাতার নগরপাল। মোদ্দা কথা, গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সঙ্গে রইল হুশিয়ারি, এমন গুজব দেখলে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নেবে, গ্রেপ্তার করা হবে।
তার আগেই অবশ্য গ্রেপ্তারির পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নামে সমালোচনা থাকায় কয়েকজনকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। কোর্টে হয়ত তোলা হয়নি। সরকারিভাবে গ্রেপ্তার দেখানোও হয়নি। এ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।
একদিকে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, সোশাল সাইটে সমালোচনা করলে তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। কিন্তু রাজ্য সরকার আবার সেই অম্বিকেশ কান্ডের পুনরাবৃত্তি করতে চাইছে।
এটা ঘটনা, গত কয়েকদিন হোয়াটস অ্যাপে নানা ধরনের মেসেজ আসছে। ফেসবুকেও ছড়িয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় উস্কানিমূলক এই প্রচার সরকার আটকানোর চেষ্টা করুক, তাতে আপত্তির কিছু নেই। তাই বলে সামান্য সমালোচনা করলেও যদি তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, সে তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার। পুলিশ কি গুজব ছড়ানোর কড়াকড়ির পাশাপাশি এই বার্তাও দিয়ে রাখল?
কেন এই গুজব ছড়াচ্ছে, ভেবে দেখেছেন? পুলিশ বা প্রশাসন যদি বিশ্বাসযোগ্য থাকত, তারা যদি সত্যি কথা বলত, তাহলে এই গুজব সেভাবে ছড়াত না। কিন্তু স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম কাজ হল, কিছু ঘটলেই সেটাকে অস্বীকার করা। তারপর তার পেছনে চক্রান্ত খোঁজা। রোজ রোজ এত মিথ্যে যে কোনও মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারেন, সেটা সত্যিই আমাদের ধারনা ছিল না। পুলিশ যে এত বড় কেলেঙ্কারির এভাবে প্রমাণ লোপাট করতে পারে, সেটাও কারও ধারণা ছিল না। যেখানে যা ঘটছে, পুলিশ বেমালুম চেপে যাচ্ছে। প্রমাণ লোপাট করতে উঠে–পড়ে লাগছে। চোখের সামনেই এমনটা রোজ দেখা যাচ্ছে। অবস্থা এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, এই পুলিশ সত্যি বললে, সেটাও বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুলিশ বা প্রশাসন যদি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য থাকত, তাহলে এই গুজব ডালপালা মেলার সুযোগই পেত না। গুজব বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে, কারণ প্রশাসন ক্রমাগত মিথ্যের বেসাতি করে যাচ্ছে। কেন এই গুজব ছড়াচ্ছে, তার কারণ যদি খুঁজতে হয়, পুলিশ আগে আত্মসমীক্ষা শুরু করুক।