দিব্যেন্দু দে
কে যে সুস্থ আর কে অসুস্থ, তাই নিয়েই মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে। আমরা কয়েকজনের গায়ে বিকৃত তকমা এঁটে দিই। তারপর সারাদিন তাদের নিয়ে মেতে থাকি। বিকৃত তাহলে কে ? সে নাকি আমরা নিজেরা ?
মাস দুই আগের কথা। শেকসপিয়ার সরণিতে দেবযানীর কঙ্কাল আর তাকে ঘিরে পার্থর নানা কর্মকান্ড। দিদির কঙ্কাল আঁকড়ে নাকি দিনের পর দিন পড়েছিলেন পার্থ দে। সে নাকি মানসিক বিকারগ্রস্থ। তাকে নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে মিডিয়া কী মাতামাতিটাই না করল। আর আমরাও তা গিলে গেলাম।
দিন পনের আগে। শিনা বোরা হত্যাকান্ড। মা ইন্দ্রাণীকে নিয়ে এবার পড়লাম আমরা। সকাল থেকে টিভিতে যেন আর কোনও খবর নেই। কে কার মেয়ে, কে কার মা, কার সঙ্গে কার অবৈধ সম্পর্ক। টিভি দেখলে বা কাগজ পড়লে মনে হবে, দেশে বোধ হয় ওই একটাই ঘটনা ঘটেছে।
সেই ঘটনার রেশ তখনও ফুরোয়নি। তার মধ্যেই পাওয়া গেল আরেক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। মা ও মেয়েকে নাকি খুন করে বস্তায় ভরে ভাসিয়ে দিয়েছেন এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। একানেও অবৈধ সম্পর্ক আর পরকীয়ার গল্প। ব্যস, অষ্টপ্রহর শতনাম জপতে লাগল সব চ্যানেল। এবিপি, ২৪ ঘণ্টা, ইটিভি নিউজ, কলকাতা টিভি, নিউজ টাইম- কেউ ব্যতিক্রম নয় । কে কত বিকৃত প্রচার করে যেতে পারে, তার নগ্ন প্রতিযোগিতা। পরের দিনের দৈনিক কাগজগুলিতেও তাই। প্রথম পাতা দিনের পর দিন জুড়ে আছে এই সব ঘটনা।
সত্যিই, আর সহ্য করা যাচ্ছে না। বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে। অসভ্যতারও একটা সীমা আছে। এর নাম বুঝি সাংবাদিকতা ? সেই পার্থকে আর ততখানি অস্বাভাবিক মনে হয় না। মেয়েকে খুন করা ইন্দ্রানীর উপরেও বোধ হয় ততখানি রাগ হয় না। মা ও মেয়েকে খুন করা সমরেশকেও বোধ হয় ক্ষমা করা যায়। কিন্তু সচেতনভাবে এই চ্যানেলওয়ালারা যা করছেন, তাতে তাদেরকেই বেশি বিকৃত মনস্ক মনে হচ্ছে।