সরল বিশ্বাস
সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্ত আটকাতে কী মরিয়া চেষ্টাই না করলেন। আপনি আইনমন্ত্রী। তবু সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে সিবিআই দপ্তরে গিয়ে ধর্নায় বসে গেলেন । আসলে, মন্ত্রীর কী দায়িত্ব, হয় বোঝেননি। আর নইলে বুঝলেও মানার কোনও সদিচ্ছা নেই।
সম্প্রতি, পরিষদীয় সচিব নিয়োগকে অবৈধ ও অসাংবিধআনিক আখ্যা দিয়েছে হাইকোর্ট। সহজভাবে কোর্টের রায়কে মেনে নেওয়াই ছিল শোভনীয়। কিন্তু আপনারা ছুটছেন সুপ্রিম কোর্টে। এখানে খুব একটা সুবিধা হবে, এমন আশা না করাই ভাল।
সেসব কথা থাক। আজ একটি ‘ছোট ঘটনা’র কথা উল্লেখ করা যাক। গত পরশু রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজের ঘটনা। আপনার দলের এক ছাত্রনেতা ফোনে হুমকি দিচ্ছেন ‘থানা জ্বালিয়ে দেব। থানায় গিয়ে বোম মারব।’ সব ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। সারাদিন ধরে টিভিতে দেখানো হয়েছে। সেই ফুটেজও আছে।
আইনমন্ত্রী হিসেবে এই মন্তব্যকে সমর্থন করেন ? পরিষ্কার করে বলুন। এমন ঘটনার পর পুলিশ তাঁকে অ্যারেস্ট করল। এটাই স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। কিন্তু রাজ্যে ইদানীং স্বাভাবিক ঘটনাগুলোকেই অস্বাভাবিক মনে হয়। অভিনন্দন পুলিশকে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁরা সাহসিকতার পরিচয় দিলেন। সারা রাজ্যে পুলিশের মেরুদন্ড নেই, এই প্রচার যখন ক্রমশ জোরদার হচ্ছে, তখন রানিগঞ্জের পুলিশ অন্তত প্রমাণ করলেন, তাঁরা মেরুদন্ডটা আলমারিতে রেখে আসেননি
আগে পুলিশের ভূমিকা যাই হয়ে থাক, অন্তত এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকার প্রশ্ংসা করতে কোনও দ্বিধা থাকা উচিত নয়। পুলিশকে এমন ভূমিকায় দেখলে সত্যিই ভরসা জাগে। তারপর আজ আপনার সরকারি আইনজীবী কী ভূমিকা নিলেন ? গত পরশুই জেল হেফাজত দেওয়া হয়েছিল সেই অভিযুক্ত ছাত্র নেতাকে। আজ যখন তাঁকে কোর্টে তোলা হল, তখন আপনার সরকারি আইনজীবীকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। সেই কীর্তিমান ছাত্র নেতার আইনজীবী জামিনের জন্য সওয়াল করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। সরকারি উকিল সেই জামিনের বিরোধীতা করবেন, সেটাও স্বাভাবিক। কিন্তু আপনার সরকারি আইনজীবীর দেখাই পাওয়া গেল না ! পুলিশ যেসব ধারা দিয়েছিল, সেই ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব যাঁর উপর, তিনি কোর্টে আসারও সাহস দেখাতে পারলেন না।
হয় ভয়ে। নইলে গোপন কোনও বোঝাপড়ায়। চন্দ্রিমা দেবী, এমন সরকারি আইনজীবীর জন্য আপনার লজ্জা হচ্ছে না ? জনগনের ট্যাক্সের টাকার এই আইনজীবীদের নিয়োগ করা হয়। আর তাঁরা কিনা এইসব ‘থানায় বোম মারা বা জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া লোকেদের জামিনের পথ সুনিশ্চিত করছেন ? এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রায় সব জেলাতেই এই ছবি দেখা যাচ্ছে। সরকারি আইনজীবী হিসেবে অধিকাংশক্ষেত্রে এইসব পেটোয়া লোকেদের নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের অনেকে আইনটা বোঝেনও না। বুঝলেও দ্রুত হাত মিলিয়ে ফেলছেন অপরাধীদের সঙ্গে।
আজ আপনার সরকারি আইনজীবী এল না। এটা নিছক একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর তাৎপর্য আরও অনেকবেশি। এর প্রভাব আরও সুদূরপ্রসারী। সেই ‘স্বনামধন্য’ ছাত্রনেতা বুঝে গেল, তাকে আটকে রাখার ক্ষমতা পুলিশের নেই। জেলায় জেলায় তার মতো মাতব্বরদের কাছেও ঠিক এই বার্তাটাই গেল। পুলিশ যদিওবা ধরে, তাদের বাঁচানোর জন্য সরকারি আইনজীবীরা আছেন।
মাননীয় আইনমন্ত্রী, এর পরে এই দপ্তরের মন্ত্রী থাকার নৈতিক অধিকার আপনার আছে ? আপনার যে আইনজীবী এলেন না, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবেন ? পারবেন তাঁকে সরকারি আইনজীবীর প্যানেল থেকে সরিয়ে দিতে ? হাইকোর্টে হারলে কথায় কথায় সুপ্রিম কোর্ট ছুটে যান। নিম্ন আদালতে একজন কুখ্যাত অপরাধী জামিন পেয়ে গেল। পারবেন সুবিচারের জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে ? পারবেন না। সে ক্ষমতাও আপনার নেই। সে সদিচ্ছাও আপনার নেই।
নিজে একজন আইনজীবী। এর পরেও বুঝতে পারছেন না আপনার দপ্তর কতটা ব্যর্থ ? আইনের নামে যে জঙ্গলের শাসন চলছে, আপনি সেই প্রশাসনের আইনমন্ত্রী। এর পরেও আপনি লালবাতির গাড়িতে চড়বেন। এরপরেও পুলিশ আপনাকে স্যালুট করবে। সত্যি করে বলুন তো, এই স্যালুট পাওয়ার কোনও যোগ্যতা আপনার আছে ?