নন্দ ঘোষের কড়চা
নন্দ ঘোষের গতিবিধি অবাধ। রাজনীতি থেকে খেলা, ব্যবসা থেকে সিনেমা, তিনি সব ব্যাপারেই সোচ্চার। এবার তাঁর টার্গেট সৃজিত মুখার্জি
তিনি ছবি বানালেই বড় ভয় করে। এমন দুর্বোধ্য বিষয়, তিনি নিজে ছাড়া আর কেউ বোঝে না।
এই যে দর্শক বোঝে না, এটা কার দোষ, বলুন তো ? উঁহু, পরিচালককে দোষ দেওয়া যাবে না। তিনি মহাপন্ডিত। দোষ আমার, আপনার মতো আম পাবলিকের। যারা ভাবে সৃজিতের ছবি দেখলে লোকে বোধ হয় বুদ্ধিজীবী বলবে। এই ভেবে দেখতে যায়। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না।
অন্য পরিচালক তবু সহজভাবে গল্প বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই পরিচালক হলেন মহা পুচ্ছ পাকা। বিস্তর রিসার্চ করেন। তারপর প্রোডিউসারের টাকায় অশ্বডিম্ব প্রসব করেন।
কাগজে লেখা হয়, দারুণ একটা বিষয়। এমন বিষয় নিয়ে নাকি আগে কখনও ছবি হয়নি। বাংলা মান নয়, ভারতীয় মান নয়, একেবারে সরাসরি বিশ্বমানের। এসব যদি বলতে পারেন, তাহলে আপনাকে বোদ্ধা হিসেবে মান্যিগন্যি করা হবে। নইলে আপনি বুদ্ধুরাম।
আগের ছবিটাই ধরুন। রাজকাহিনি। কোথায় রাজা, কোথায় কাহিনি। একগুচ্ছ মহিলা। প্রায় এগারোজনের ফুটবল টিম। এতেও বাবুর শান্তি নেই। একই গান এগারো জনকে দিয়ে গাইয়ে দিলেন। একেকজনের ভাগে পড়ল এক লাইন করে। এর নাম পরীক্ষা নিরীক্ষা।
এবার আবার জুলফিকার। কার জুলফি, কীসের ফিকর কে জানে! এখানে তিনি নাকি সেক্সপিয়রকে এনেছেন। অনেকদিন ধরে নাকি তাঁর শখ হয়েছিল একটু সেক্সপিয়র চর্চা করবেন। একটা নয়, দুটো ভিন্ন সময়ের দুটো কাহিনিকে পাঞ্চ করে দিয়েছেন। ভেবে দেখুন দেবদাস আর পথের দাবিকে পাঞ্চ করলে কেমন হবে। গোরার সঙ্গে যদি চোখের বালি মিশিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কেমন হয় ? আজগুবি লাগছে তো ? আপনি, আমি বুঝি। কিন্তু ওই সৃজিত মুখু্জ্জে বোঝে না। ভারি আমার রিসার্চ করনেওয়ালা। সেক্সপিয়রের পিন্ডি চটকে দিয়েছে মশাই। মরা সাহেব যদি কবর থেকে উঠে আসে, তার জন্য কিন্তু ওই পুচ্ছপাকা পরিচালকই দায়ী।
এতেও বাবুর শান্তি হয়নি। প্রসেনজিৎ আর দেবকে একসঙ্গে নিয়েছেন। পরমব্রতকেও নিয়েছেন, যিশুকেও নিয়েছেন। পাওলি, নুসরতকেও ছাড়েনি। এতেও শান্তি হয়নি। জিৎ আর আবিরকেও নাকি নিতে চেয়েছিল। শাসক দল যেমন সবাইকে নিয়ে নিচ্ছে, এও অনেকটা তেমনি, একসঙ্গে সবাইকে চাই। এত তারকা নিয়ে কী প্রমাণ করতে চাও বাপু ? তুমি খুব হনু ? এত তারকাকে একসঙ্গে সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণাল, তপন সিনহা, তরুণ মজুমদার- কেউ নামাতে পারেনি। আপনি করে দেখালেন। অতএব আপনি তাঁদের থেকে বড় পরিচালক, এই তো ?
তারকাদেরও বলিহারি বাপু। কী দেখে এইসব ছবিতে নাম লেখাও ? একটা ‘নির্বাক’ দেখেও শিক্ষা হয়নি ? সুস্মিতা সেন ভেবেছিল, প্রাইজ-টাইজ কিছু একটা পাবে। এখন হাড়ে হাড়ে বুঝেছে, ওই ছবি না করলেই ভাল হত। আর এ পথ মাড়ায়নি। তবু ভাল, জিৎ বা আবির বুঝতে পেরেছে। আবিরের মাথায় সত্যিই তাহলে বুদ্ধি আছে (এবার থেকে ওকে ব্যোমকেশ হিসেবে মানা যায়)।
কিন্তু মিডিয়া রিপোর্ট পড়লে মনে হবে অস্কার পাওয়ার মতো একটা ছবি বোধ হয় তৈরি হল। নেহাত বাংলা ভাষা, তাই বঞ্চনার শিকার। জাতীয় স্তরে জুরিরা দু-একটা পুরস্কার দিয়ে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। আসলে, অন্য ছবিগুলো তবু দেখা যায়, বোঝা যায়। এটা তিন ঘণ্টা বসে দেখাও যায় না, দেখলেও বোঝা যায় না। তার থেকে বাপু না দেখে একটা পুরস্কার দিয়ে দেওয়া অনেক ভাল।
বিশ্বাস করুন, এইভাবেই ছবিগুলো পুরস্কার পায়। চুপি চুপি গোপন কথাটা আপনাদের জানিয়ে দিলাম। আপনারা যেন পাঁচকান করবেন না।