(ভোট এগিয়ে আসছে। উঠে আসছে নানা ভাবনা, বিতর্ক। এসব দিকে আলো ফেলছে বেঙ্গল টাইমস। কোন দলের কী করা উচিত ? কার বিরুদ্ধে কাকে প্রার্থী করা উচিত ? জোট হলে, তার ফর্মুলা কী হওয়া উচিত ? এমন নানা বিষয়। কলম ধরছেন ‘বাংলার প্রশান্ত কিশোর’ অজয় কুমার।)
কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট হবে কিনা, এখনও স্পষ্ট নয়। এদিকে সূর্যবাবু বা অধীরবাবুরা যাই বলুন, শেষমেষ বল সেই সোনিয়া গান্ধীর কোর্টে। রাহুল গান্ধী যাচ্ছেন কেরলে। সেখানে তিনি কথা বলবেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে। কেরলে লড়াই বামেদের সঙ্গে। আর বাংলায় সেই বামেদের সঙ্গেই যদি সমঝোতা হয়! দুই রাজে দু রকম অবস্থানে কি অস্বস্তিতে পড়তে পারে কংগ্রেস ?
সে প্রসঙ্গ থাক। আমরা বরং রাজ্যে জোটের প্রসঙ্গে আসি। ধরে নিন, রাজ্যে জোট হল। কংগ্রেস ১০০ বা তার বেশি আসন চাইল। বামেরা বলল, ৬০ দিতে পারি। শেষমেষ হয়ত সত্তর বা আশিতে রফা হল। তারমধ্যে ধরুন কংগ্রেস তিরিশ বা চল্লিশটি আসনে জিতল।
এবার কী হতে পারে ? বামেরা নিজেদের আসন বিসর্জন দিয়ে, খেটেখুটে কংগ্রেসকে জেতালেন। এরপর সেই কংগ্রেস বিধায়কদের হাতে পতাকা ধরিয়ে দিলেন মুকুল রায় বা অভিষেক ব্যানার্জি । আর তোতা পাখির মতো শেখানো বুলি বলে গেলেন সেই কংগ্রেস বিধায়করা, ‘মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে যে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে, তাতে সামিল হলাম। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই তৃণমূলে যোগ দিলাম।’
নিশ্চিত থাকুন, তৃণমূল যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তাহলে মাঝে মাঝেই এই জাতীয় ঘটনা ঘটবে। শুরুতেই হয়ত ঘটবে না। হয়ত দু বছর বা তিন বছর পরে ঘটবে। আর যদি সরকার গড়তে কয়েককজন কংগ্রেস বিধায়ককে দরকার হয়, তাহলে নানা প্রলোভন বা ভয় দেখিয়ে দলে টানার চেষ্টা করবে তৃণমূল। শুধু কং শিবির নয়, বাম বিধায়কদের দিকেও হাত বাড়ানো হবে। প্রথমে শরিকদের দিকে, তারপর খোদ সিপিএমের দিকে।
যারা পরে ‘উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে’ সামিল হতে চান, তাঁরা দয়া করে এখনই সামিল হয়ে যান। বাম এবং কংগ্রেস- দুই শিবিরের কাছেই অনুরোধ, নিজেদের প্রার্থীদের দিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে নিন। ‘উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ’ বা ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’র দোহাই দিয়ে আগামী পাঁচ বছর কোনওভাবেই তৃণমূলে যোগ দেওয়া যাবে না। যদি দল ছাড়তেই হয়, বিধানসভা থেকে পদত্যাগ করব। যদি তৃণমূলে যোগ দিই, তাহলে জানবেন আমি একজন বিশ্বাসঘাতক।’
যদিও এই মুচলেকার কোনও আইনি ভিত্তি নেই। এবং যাঁরা এইভাবে দল বদলান, তাঁরা নীতি বা নৈতিকতার ধার ধারেন না। তবু এই মুচলেকা থাকুক। কং প্রার্থীদের মুচলেকা থাকুক বামেদের কাছে। বামেদের মুচলেকা থাকুক কংগ্রেসের কাছে।
প্রস্তাবটা দেওয়া রইল। বাম ও ডান- দুই শিবির ভেবে দেখতে পারেন।