রবি কর
আগামী সরকারের আদর্শ মন্ত্রীসভা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে অনেকের মুখেই অনেক কথা শুনছি। কেউ বলছে তৃণমূল ক্ষমতায় এলে অমুককে সরিয়ে তমুককে আনা উচিত। বেঙ্গল টাইমসের এডিটর তো আবার বাম-কং জোটের বিকল্প মন্ত্রীসভা বানিয়ে ফেললেন।
কিন্তু আমার মতে এগুলো কোনটাই আদর্শ মন্ত্রীসভা নয়। সত্য কথা বলতে কী, এই পোড়ার দেশে আদর্শ মন্ত্রীসভা গঠন সম্ভবই নয়। ধরুন আদর্শ মন্ত্রীসভার যিনি আদর্শতম মন্ত্রী হতে পারতেন তিনি ভোটে হেরে গেলেন। তাহলে আদর্শ মন্ত্রীসভা হবে কী করে? আবার ধরুন একজন সংগঠনের কাজ করতে গিয়ে ভোটে লড়তে পারলেন না। অথচ তাঁর মধ্যে মন্ত্রী হবার সব উপাদান আছে।
তাই আমার আদর্শ মন্ত্রীসভায় বিজয়ী, হেরো, ভোটে টিকিট না পাওয়া, এমনকি লোকসভার সদস্যদের সুযোগ দেওয়া হবে। একবার মন্ত্রীসভা গঠিত হোক, তারপর উপনির্বাচনে জিতে নিলেই হবে। প্রয়োজনে বিরোধী দলের নেতাদেরও মন্ত্রীসভায় ঠাই দেওয়া হবে।
এই মন্ত্রীসভার মুখ্যমন্ত্রীর নাম এখনই বলছি না। একদম শেষে বলব।
১) প্রথমেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীঃ এই পদে অনুব্রত মণ্ডলের থেকে যোগ্য কেউ হতেই পারেন না। পুলিশ প্রাণীটিকে কড়া হাতে দমন না করলেই বেগড়বাই শুরু করে। তাছাড়া সুষ্ঠু প্রশাসন চালানোর জন্য বিরোধী এবং বিক্ষুব্ধদের টাইট দেওয়া প্রয়োজন। কেষ্টবাবু পুলিসের সাহায্য ছাড়াই বিরোধী এবং বিক্ষুব্ধদের বাপের নাম খগেন, থুড়ি সাগর ঘোষ করে দিয়েছেন। পুলিশকে হাতে পেলে একেবারে শান্তিকল্যাণ স্থাপন করবেন। আর পুলিশ যদি বাধা দেয় তাহলে, সেই পুলিসের ওপর বোম মারা হবে।
২) অর্থমন্ত্রীঃ সুদীপ্ত সেন। রাজ্যের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। খোলাবাজার থেকে ঋণ নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। বাজার থেকে ঋণ নিয়ে বাজারকে চাঙ্গা করতে হবে অর্থাৎ মাছের তেলে মাছ ভাজতে হবে। এই কাজে সুদীপ্তর থেকে যোগ্য কে আছে? কী বললেন, উনি জেলে আছেন? তাতে কী হয়েছে? জেলে থেকে কি মন্ত্রী হওয়া যায় না? গত ৫ বছরে আপনি এই শিখলেন?
৩) স্বাস্থ্যমন্ত্রীঃ আমরা বিবেকানন্দর দেশে জন্মেছি কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কিছুই শিখিনি। তিনি শিবজ্ঞানে জীব সেবার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমরা শুধু মানুষকে নিয়েই ভাবলাম, শুধু মানুষের জন্যই স্বাস্থ্যদপ্তর গড়লাম। কেন মানুষ ছাড়া অন্য জীবরা কি শিব নয়? যে ছাত্ররা মেডিকেল পরীক্ষায় টোকাটুকি করে তারা কি শিব নয়? নতুন সরকার মানুষের পাশাপাশি কুকুরদের জন্যও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে, মেডিকেল পরীক্ষায় অবাধ টোকাটুকির ব্যবস্থা করবে, আর এই কাজে who else but নির্মল মাজি। তিনিই আমাদের আদর্শ স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
৪) শিল্পঃ মমতা ব্যানার্জি। মাইরি বলছি, এতো ছোট পদ তাঁর পক্ষে যথেষ্ট নয়, কিন্তু তেলেভাজা শিল্পের থিওরি আবিষ্কার করে যিনি নজির সৃষ্টি করেছেন, টাটার পথে কাঁটা বিছিয়ে যিনি বিখ্যাত, জিন্দালরা প্রকল্প বাতিল করলে যিনি খুশি হন, তিনি ছাড়া কে হবেন শিল্পমন্ত্রী?
কৃষি ও ভূমিসংস্কারঃ নজির স্থাপন করে শিল্পের পাশাপাশি কৃষির দায়িত্বও মমতা ব্যানার্জির হাতে দেওয়া হল। কারণ, শিল্পস্থাপন করতে গেলে, কৃষিজমি নিতেই হবে। আর দুজন আলাদা আলাদা মন্ত্রী থাকলে খটাখটি লগাবেই। যেমন লেগেছিল বামফ্রন্ট আমলে নিরুপম সেন আর রেজ্জাক মোল্লার। আদর্শ মন্ত্রীসভায় দুটি দায়িত্বই মাননীয়ার হাতে থাকবে। এবার কোন জমি কৃষির, কোন জমি শিল্পের, কে ইচ্ছুক, কে অনিচ্ছুক, তা তিনি নিজেই ঠিক করুন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, তাঁর হাতে কৃষির অভাবনীয় উন্নতি হবে। চাষার ছেলে চিরকাল চাষাই থাকবে। এতে পারিবারিক রোজগার কম হয়, হোক।সবাইকেই সরকার দু টাকা কিলো দরে চাল দেবে।
সারের দাম নিয়ে কৃষকদের মনে কোনও প্রশ্ন থাকবে না। কারণ, প্রশ্ন করতে গেলেই শিলাদিত্য চৌধুরির মতো মাওবাদি বলে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।
শিক্ষা)
মাস কয়েক আগে পর্যন্ত এই পদে যোগ্যতম প্রার্থী ছিলেন আরাবুল ইসলাম। তাঁর প্রতিভা রবীন্দ্রনাথের থেকেও বেশি। রবীন্দ্রনাথ ইস্কুলের পড়া বেশিদূর পড়েননি। কিন্তু তিনি কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতিও হননি। কিন্তু শ্রীমান আরাবুল স্কুলছুট হয়েও কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হয়েছেন। তাই আমরা ভেবেছিলাম, তাঁকেই শিক্ষামন্ত্রী করা হবে।
কিন্তু দিলীপ ঘোষ বিজেপির রাজ্য সভাপতি হয়ে আরাবুলের বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছেন। শিক্ষা মানে কেবল পড়াশোনা নয়। ছাত্রদের উত্তম –মধ্যম ঠ্যাঙানোও শিক্ষকদের কর্তব্য। শ্রী ঘোষ যেভাবে ছাত্রদের ‘পেছনে লাথি মারব’, ‘জিভ টেনে ছিঁড়ে দেব’, ‘একবার ক্যাম্পাসের বাইরে আয়, তারপর দেখছি’ প্রভৃতি বাণী দিয়েছেন, তাতে তাঁর থেকে যোগ্য শিক্ষামন্ত্রী কেউ হতেই পারে না। তিনি মন্ত্রী হলে, দিদির সঙ্গে মোদির বন্ধুত্বের বার্তাটিও জোরদার হবে।
ক্রীড়া)
এই মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকবেন আরাবুল ইসলাম। বহুদিন হয়ে গেল, বাংলা থেকে কেউ অলিম্পিকে পদক পায় না। কিন্তু যেভাবে নিখুঁত লক্ষ্যে শিক্ষিকাকে জগ ছুঁড়ে মারেন, যেভাবে রেজ্জাককে বাঁশপেটা করেন, তাতে তাঁর আমলে বাংলায় প্রচুর মুষ্টিযোদ্ধা, কুস্তিগির, তীরন্দাজ, গোলন্দাজের আবির্ভাব হবে।
কারাঃ মদন মিত্র
শিক্ষামন্ত্রী যেমন কোনও অধ্যাপককে করতে হয়, অর্থমন্ত্রী যেমন কোনও অর্থনীতিবিদকে করতে হয়, কারামন্ত্রীও তেমনি কোনও জেলখাটা ব্যক্তিকেই করা উচিত। এতদিন বাংলায় উপযুক্ত কারামন্ত্রীর অভাব ছিল। অনেকে বলছেন, শুধু কারা কেন, আবগারী দপ্তরও তাঁকেই দেওয়া হোক। এই দাবি আমরা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছে দেব।
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন—মুকুল রায়।
গ্রাম বাংলাকে অধিকাংশ নেতাই চেনেন না। চেনেন একজন, মুকুল রায়। তিনি জানেন, বাংলার অনেক গ্রাম পঞ্চায়েত এখনও বিরোধীদের দখলে। আগামীদিন এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এই বিরোধী পঞ্চায়েতগুলোকে ‘উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে সামিল’ না করতে পারলে (অর্থাৎ তৃণমূল ভবনে পতাকা না তুলে দিলে) প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই কাজে মুকুল রায় নিজের দক্ষতা বারবার প্রমাণ করেছেন। মন্ত্রী হিসেবেও করবেন।
পুর ও নগরোন্নয়ন- সব্যসাচী
নগরোন্নয়ন করতে গেলে জলা জমি বোজাতেই হবে। নতুন বিল্ডিং করতে গেলে সিন্ডিকেটকে হাতে রাখতেই হবে। এই কাজে সবথেকে দক্ষ ব্যক্তি সব্যসাচী দত্ত। তিনি এতটাই দক্ষ যে, মন্ত্রকের নাম পাল্টে সিন্ডিকেট দপ্তর করে দেওয়া যায়।
১০) পূর্ত ও সড়কঃ স্মিতা বক্সি
পূর্ত মানে হল নতুন রাস্তা-ঘাট, সেতু ইত্যাদি গড়ে তোলা। কিন্তু দিদিমণির চার বছরের রাজত্বে চারশো বছরের কাজ হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন সেতু গড়তে গেলে পুরনো সেতু ভাঙতে হবে। এই কাজে স্মিতা বক্সী ইতিমধ্যে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। তাঁকে পূর্তমন্ত্রী করতে আগামী পাঁচ বছর প্রচুর ভাঙাভাঙি চলতে থাকবে।
খাদ্য- পার্থ চ্যাটার্জি
চেহারাটি যা বানিয়েছেন, দেখে দামোদর শেঠ অথবা ছোটবেলায় কিশলয়ে পড়া নুটুবাবুর কথা মনে পড়ে। দিনে কত খাবার খান, তা আমাদের জানা নেই। তবে তিনি খাদ্যমন্ত্রী হলে সারা দেশের কাছে বার্তা পৌঁছে যাবে যে, বাংলায় অন্তত একটা মানুষ খেয়ে-পরে সুখে আছে।
১২) তথ্য ও সংস্কৃতিঃ শঙ্কুদেব পাণ্ডা
এই দপ্তরের যোগ্যতম মন্ত্রী হতে পারতেন কুণাল ঘোষ। কিন্তু নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মেরেছেন। কুণালের মতো গ্রুপ মিডিয়া সিইও বাংলা আজও দেখেনি। তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরী শঙ্কুদেব পাণ্ডা। এমনকি নারদায় ঘুস নেওয়ার সময়ও তিনি টাকা চান না, কোম্পানির অংশীদারিত্ব চান। এইভাবেই তিনি বহু ছোটখাটো মিডিয়ার কাজে নাক গলিয়ে থাকেন। সাফল্যের সঙ্গেই তিনি তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তর চালাতে পারবেন। তবে কুণাল মূলস্রোতে ফিরে এলে, শঙ্কুকে পদ ছাড়তেই হবে।
নারী ও শিশুকল্যাণ – তাপস পাল।
চন্দননগরের এই ‘মাল’ ছাড়া মেয়েদের দুঃখ কে বুঝবে? রাজনৈতিক অশান্তির কারণে গ্রামে গ্রামে পুরুষরা ঘরছাড়া, বহু মেয়ে বিধবা, বহু মেয়ের স্বামী হুমকিতে ভয় না পেয়ে শাসকের সামনে লড়ে যাচ্ছে। এই মেয়েদের ঘরে দলের ছেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তাপস পালকেই নিতে হবে। বাংলার নারীদের এতবড় বন্ধু এ যুগে আর কেউ নেই।
তথ্য প্রযুক্তিঃ ডেরেক ও’ব্রায়েন
বেশি কিছু বলব না বাবা। বললে আবার ফেসবুক থেকে ব্লক করে দেবে। এটুকুই বলতে পারি, ফটোশপ করে নরেন্দ্র মোদির মুখে প্রকাশ কারাতের মুখ বসিয়ে দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন, প্রযুক্তির কাজে তিনি কতটা দক্ষ। কুইজ-টুইজ লাটে তুলে তিনি আজকাল ফেসবুক, টুইটার নিয়েই থাকেন। বিরোধীরা শুধু কুৎসা করে। তাই সোশাল সাইটে বিরোধীদের ব্লক করতে ডেরেক ও তাঁর বাহিনীকেই দরকার।
বুদ্ধিজীবী মন্ত্রীঃ এই সরকারের সঙ্গে অনেক বুদ্ধিজীবী। এই নামে একটি আলাদা মন্ত্রক চালু করা দরকার ছিল। কিন্তু এই মন্ত্রকের দাবিদারের সংখ্যা এত বেশি, যে অশান্তি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ভয়ে এই ইচ্ছেকে মুলতুবি রাখতে হল।
স্পিকারঃ সোনালি গুহ
গত বিধানসভায় তাঁকে ডেপুটি স্পিকার করে অত্যন্ত অবিচার করা হয়েছিল। স্পিকার মানে, যিনি কথা বলেন। যিনি বিধানসভা কক্ষে শাসক ও বিরোধীদের শান্ত রাখেন। সোনালির মতো অনর্গল কথা পৃথিবীর খুব কম লোকই বলতে পারেন। আর সেই কথার সঙ্গে যেসমস্ত বেদবাক্য মিশে থাকে, তাতে বিধানসভা তো দূরের কথা, বস্তির কলতলা অব্দি শান্ত হয়ে যায়।
রাজ্যপালঃ কেশরীনাথ ত্রিপাঠী
এই মন্ত্রীসভার জন্য তাঁর থেকে যোগ্য লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মুখ্যমন্ত্রীঃ সুমন দে।
এই মন্ত্রীসভা নিয়ে সরকার চালা, দেখি কেমন বাপের ব্যাটা তুই। রোজ সন্ধে বেলা দলবল নিয়ে দিদির কুৎসা করা। জানিস তো না কি সব মালকে নিয়ে দিদির সংসার। নে দিদির সংসার তোর হাতে তুলে দিলাম। কী করে গরমেন্ট চালাবি চালা।