স্বরূপ গোস্বামী
গুজব নিয়ে হঠাৎই মেতে উঠেছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী থেকে পুলিশ কর্তা, হুশিয়ারি দিচ্ছেন। গুজব ছড়ালেই নাকি কড়া ব্যবস্থা।
বেশ ভাল কথা। এই মুহূর্তে আমার কয়েকটি গুজবের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশকে জানিয়ে রাখছি। তাঁরা যদি ব্যবস্থা নিতে পারেন, ভাল হয়।
আমরা জানি, পুলিশ খুব ব্যস্ত। সারাদিন নানারকম অভিযোগ এসেই চলেছে। তাই ফিরিস্তি বাড়িয়ে লাভ নেই। বেশি পুরনো উদাহরণ দেওয়ার দরকার নেই। এক মাস আগের কথা। মুখ্যমন্ত্রী ফিরছিলেন পাটনা থেকে। বিমান বিভ্রাটে তাঁর ফ্লাইট নামতে কিছুটা দেরি হয়। মুখ্যমন্ত্রী নেমেই ঘোষণা করে দিলেন, তাঁকে খুন করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সংসদে এই নিয়ে হইচই করানো হল। কয়েকদিন ধরে লাগাতার এই কথা বলে যাওয়া হল। মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, খুনের চক্রান্ত, অতএব পুলিশকেও কিছু না কিছু করতেই হবে। স্বত প্রণোদিত এফ আই আর হয়ে গেল। বেচারা পাইলট! মাঝখান থেকে তিনি সাসপেন্ড হয়ে গেলেন। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলছেন চক্রান্ত, কেন্দ্রকে কিছু একটা করতে হত। বলির পাঁঠা হলেন সেই পাইলট। বিনীতভাবে দুটি প্রশ্ন: ১) পাইলটকে দিয়ে মোদি মমতাকে খুন করাতে চেয়েছিলেন, এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে? ২) বিমান দুর্ঘটনা হলে তো পাইলটও মারা যেতেন। এটা আর কেউ না জানুক, পাইলট তো জানতেন। মমতা নোটবাতিলের বিরোধীতা করছেন বলে পাইলট তাঁকে খুন করে নিজে মরতে চাইবেন? এটাও কোনও পাগল বিশ্বাস করবে? যদি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ বা রাজীব কুমার এমনটা বিশ্বাস করেন, তাহলে বলতেই হবে, তাঁরা সুস্থ নন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত জায়গায় পাঠানো হোক। তাহলে কি দাঁড়াল? যিনি খুনের চক্রান্ত বলে এভাবে হাওয়া গরম করতে চাইলেন, সেটা গুজব নয়?
আরও একটি কথা বিনীতভাবে বলা যাক। যদি সাম্প্রতিককালে কেউ নন্দন চত্বরে গিয়ে থাকেন, তাঁরা জানবেন। নন্দন, রবীন্দ্র সদন, শিশির মঞ্চ, তথ্যকেন্দ্র, গগণেন্দ্র চিত্র প্রদর্শনশালা— সব জায়গায় বিশাল একটি ফলক আপনাদের চোখে পড়বে। বেঙ্গল টাইমসে আগেও এই নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ছোট হরফে লেখা ‘নবরূপে সজ্জিত’। তারপরই লেখা নন্দনের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হ্যাঁ, রবীন্দ্র সদন, নন্দন, শিশির মঞ্চ সব নাকি তিনি উদ্বোধন করেছেন। ভেবে দেখুন, কী নির্লজ্জ মিথ্যের বেসাতি চলছে। যাঁদের বিশ্বাস হচ্ছে না, তাঁরা দয়া করে নন্দন চত্বরে গিয়ে ফলকগুলো দেখে আসুন। সময়ের স্বাভাবিক নিয়মেই রঙ হয়, টুকটাক কিছু মেরামতি হয়। তাই বলে নন্দনেও উদ্বোধনের ফলক লাগিয়ে দিতে হবে? জেলায় জেলায় এমন কীর্তি হাজার খানেক ছড়িয়ে আছে। সেগুলোর কথা ধরছিই না। তাই বলে নন্দন–রবীন্দ্র সদনও এই মিথ্যাচার থেকে বাদ পড়ছে না? ‘নবরূপে সজ্জিত’ কথাটির আড়ালে যা রয়ে গেল, তাকে কী বলা যাবে? নন্দন তিনি উদ্বোধন করেছেন, এটা এই শতাব্দীর অন্যতম সেরা গুজব।
কোনও গুজবের খবর পেলে পুলিশকে জানানো একজন নাগরিকের কর্তব্য। দুটি মোক্ষম গুজবের কথা জানিয়ে রাখলাম। গুজবের উৎস খুঁজতে আর এখান–ওখানে ছোটার দরকার নেই। সেই উৎসকেই সকাল–বিকেল স্যালুট ঠুকুন।