নন্দ ঘোষের কড়চা
(যত দোষ, নন্দ ঘোষ। সবাই তার ঘাড়েই দোষ চাপায়। এবার নন্দ ঘোষের পালা। তিনিও একেক দিন একেকজনের দোষ ধরতে শুরু করলেন। আজ তাঁর টার্গেট সৃজিত মুখার্জি।)
আপনার কোনও বুদ্ধিজীবী শত্রু আছে ? তাকে পাঠিয়ে দিন সৃজিত মুখার্জির ছবি দেখতে।
এমন কেউ যে আপনার পেছনে লেগে আছে, ফোনে জ্বালাতন করে, আপনি তার হাত থেকে মুক্তি পেতে চান ? তাহলেও স্বচ্ছন্দে তাকে পাঠিয়ে দিন সৃজিত মুখার্জির ছবি দেখতে। বা কষ্ট করে নিজেই না হয় সঙ্গে নিয়ে যান। নিশ্চিত থাকতে পারেন, সেই বন্ধু বা বান্ধবী আপনার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখবে না।
পুচ্ছ পাকা এক পরিচালক। নিজেকে কী যে ভাবেন। ভাবেন, তিনি বোধ হয় ভুল করে ভারতে জন্মে গেছেন। বিদেশে জন্মালে ডজনখানেক অস্কার হয়ত পেয়ে যেতেন। কান বা নাক ফেস্টিভালে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতেন।
যেমন দুর্বোধ্য বিষয়, তেমন ভুলভাল উপস্থাপনা। সবমিলিয়ে যদি কারও মাথা খারাপ করার ইচ্ছে হয়, তাহলে টিকিট কেটে মাল্টিপ্লেক্সে পাঠিয়ে দিন। বিষে নাকি বিষক্ষয় হয়। আচ্ছা, কোনও পাগল লোককে যদি পাঠানো হয়, তার পাগলামি কি ভাল হয়ে যাবে ? নাকি সে আরও বেশি পাগল হয়ে যাবে? এটাও পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
সব ছবিই টোকা। মৌলিক ভাবনা নেই। মৌলিক গল্প নেই। কী সব কাহিনীর ছিরি! নির্বাক-এই দেখুন। গাছের নাকি বীর্যপাত হচ্ছে। পার্কে গাছের তলায় বেঞ্চে বসলে কাকে পটি করে, এটা হতেই পারে। তাই বলে গাছের বীর্যপাত! নতুন প্রজন্মের জগদীশ বোস। তিনিও এতটা ভাবতে পারেননি।
এসব ছবি কেন পুরস্কার পায় বলতে পারেন ? কোনও যুক্তি আছে ? আমার মনে হয়, বিচারকরা নিজেরাও কিছু বোঝেন না। বা এতক্ষণ ওই বোরিং ছবি দেখার ধৈর্যও তাদের নেই। তাই একটা পুরস্কার দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচেন।
অটোগ্রাফ থেকে হেমলক, বাইশে শ্রাবন থেকে জাতিস্মর ভুলে ভরা একেকটা সিনেমা। ভাগ্যিস সুমন সুর দিয়েছিলেন, তাই লোকে জাতিস্মরের কথা জানল। আর মিশর রহস্য? না আছে মিশর, না আছে রহস্য। সুনীল গাঙ্গুলি ভাগ্যিস বেঁচে নেই। থাকলে সত্যিই খুব কষ্ট পেতেন। ওই ছবি বানানোর জন্য মিশর যাওয়ার কোনও দরকার ছিল ? মরুতীর্থ হিংলাজ ছবি দিঘার বালিয়াড়িতেই শুটিং হয়েছিল। এক্ষেত্রেও দিব্যি দিঘায় শুটিং হতে পারত। তা না করে, প্রোডিউসারের টাকা উড়িয়ে উনি চললেন মিশর।
রাজকাহিনী আবার আরেক ধাপ উপরে। এখানে এগারো জন নায়িকা। দশ জন নয় কেন ? বারো জন নয় কেন ? এটা কি চাক দে ইন্ডিয়ার মতো মহিলাদের হকি টিম ? যুদ্ধ করতে গেলেও বুঝি এগারো জনের টিম লাগে !
এসব ছবি করে কার কী লাভ হয় বলতে পারেন ? লবি টবি করে দু একটা পুরস্কার হয়ত পাওয়া যায়। কিন্তু কোচবিহারের লোক বা পুরুলিয়ার লোক এই ছবি দেখবে? নিজেও বুঝছেন, দেখবে না। তাই এবার টিভিতে এসেছেন। ‘সঙ্গে সৃজিত’ নামে একটা আড্ডার অনুষ্ঠানে নাম লিখিয়েছেন। এটাও কপি করা।
প্রথম ছবিতে গান রেখেছিলেন, আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। নিজের মতো আর থাকলেন কোথায়? সব তো টুকলি। নিজের মতো থাকুন, এসব ভুলভাল ছবি করে লোককে জ্বালাতন নাই বা করলেন।
(লেখাটি লিখেছেন নন্দকিশোর মাহাতো। বক্তব্য একান্তই লেখকের নিজস্ব। তার জন্য বেঙ্গল টাইমস দায়ী নয়। আপনিও হয়ে উঠতে পারেন নন্দ ঘোষ। লিখতে পারেন আপনার ‘প্রিয় মানুষ’কে নিয়ে। প্রাণ খুলে সমালোচনা করুন। তাতে যুক্তি বা বুদ্ধি থাকতেই হবে, এমন কোনও শর্ত নেই। লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ bengaltimes.in@gmail.com)