স্বরূপ গোস্বামী
বহরমপুরে বসে রাজ্য চালাতে গেলে যা হয়!
পরিষদীয় রীতিনীতি না বুঝে খবরদারি করতে গেলে যা হয়!
দূরদর্শিতা না থাকলে যা হয়!
সস্তা প্রচারের ফাঁদে আটকে পড়লে যা হয়!
বয়স হলেও সাবালক না হলে যা হয়!
####
সহজ একটা বিষয়কে অহেতুক জটিল করলেন অধীর চৌধুরী। তৃণমূলের ফাঁদে মানস ভুঁইয়া যদি পা দিয়ে থাকেন, তাহলে অধীর চৌধুরিও পা দিচ্ছেন। বুঝে হোক, না বুঝে হোক।
সবাইকে অবাক করে দিয়েই পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মানস ভুঁইয়ার নাম ঘোষণা করে দিলেন স্পিকার। কিন্তু তারপর থেকে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব বা কংগ্রেস পরিষদীয় দলের কর্তারা যা যা করে চলেছেন, তা আরও ছেলেমনুষি। একটু ঠান্ডা মাথায় চললে এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
হঠাৎ সিপিএমের প্রতি বা সুজন চক্রবর্তীর প্রতি কং নেতাদের আবেগ জেগে উঠল ? আসলে, সুজনকে চেয়ারম্যান করার তাগিদ যত না ছিল, মানসকে আটকানোর তাগিদ তার থেকে বেশি ছিল। সিপিএম-কে না ছাড়লে পাছে মানস ভুঁইয়া পিএসি চেয়ারম্যান হয়ে যান, এই চিন্তাটাই বোধ হয় তাড়া করছিল অধীর চৌধুরিকে।
কোনও সন্দেহ নেই, মুর্শিদাবাদে অধীরের যথেষ্ট দাপট আছে। লোকসভায় সাড়ে তিন লাখ ভোটে জেতা মোটেই সহজ কাজ নয়। যথেষ্ট জনভিত্তি না থাকলে তা সম্ভব নয়। কিন্তু যে জিনিসটা তিনি বোঝেন না, সেই বিষয়ে খবরদারি করতে যাচ্ছেন। হঠাৎ হাইকমান্ড আব্দুল মান্নানকে বিরোধী দলনেতা বেছে নিল, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। সহজ কথা, মানসকে আটকানোর জন্য যা যা করা দরকার, তাই তাই করেছেন অধীর। এই বিপর্যয়ের পরেও আত্মঘাতী খেলায় মেতেছেন।
মানস ভুঁইয়াকে যেভাবে অসম্মানিত করা হচ্ছে, তা সবংয়ের বিধায়কের প্রাপ্য ছিল না। বিরোধী দলনেতা যদি নাও করা যায়, অন্তত বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক করা যেত। তা কিনা করা হল মনোজ চক্রবর্তীকে! অধীর বোধ হয় ভুলে গেছেন, মানস কযেক বছর আগেও প্রদেশ সভাপতি ছিলেন। ২৫ বছর আগে মুখ্য সচেতক ছিলেন। পরিষদীয় দলনেতা ছিলেন। তাঁকে কোনও কমিটিতে রাখতে গেলে চেয়ারম্যান হিসেবেই রাখা দরকার। পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে তাঁর নামটা তখনই পাঠানো উচিত, যখন তাঁকে চেয়ারম্যান করা হবে।
যাঁদের নাম পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই স্পিকার বেছে নিয়েছেন। স্পিকারকে এই সুযোগটা কে করে দিয়েছে ?
মানসের নাম ঘোষণার পর থেকে যা যা ঘটল, তা আরও হাস্যকর। পিএসি চেয়ারম্যান পদে কংগ্রেস নেতার নাম ঘোষণা হল। অথচ, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে কংগ্রেস ওয়াক আউট করল। তক্ষুনি ওয়াক আউট না করলেই চলছিল না ? ঘরের বিবাদটাকে এভাবে বেআব্রু না করলেই চলছিল না ?
এবার মিডিয়া সেন্টারে চলে এলেন আব্দুল মান্নান। ক্ষোভ উগরে দিলেন স্পিকারের প্রতি। সেইসঙ্গে হাত মেলানোর ইঙ্গিত মানসের দিকে। নিজের দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা সম্পর্কে প্রকাশ্যে এই জাতীয় মন্তব্য না করলেই চলছিল না ?
কোনও সন্দেহ নেই, পিএসি-র চেয়ারম্যান পদে মানস ভুঁইয়াই যোগ্যতম। তাঁর ধারেকাছেও অন্যরা নেই। একশো মাইলের মধ্যেও কাউকে আনা যায় না। সিপিএম-কেই যদি ছাড়তে চান, সেই সিদ্ধান্ত নিতে এত সময় লাগল কেন ? একেবারে যেদিন কমিটি ঘোষণা হবে, সেইদিন জানাতে হল ? হাইকমান্ডের অনুমতিই যদি দরকার হয়, সেই চেষ্টা আগে করা হয়নি কেন ? পরিষদীয় দলে কি বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা যেত না ?
শাসক দল বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন আনতে চাইবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিরোধীরা কেন সেই ফাঁদে পা দেবে ? মানসবাবুর নাম যদি ঘোষণা হয়েও থাকে, তাঁকে পরে বোঝানো যেত। বুঝিয়ে সুঝিয়ে পদত্যাগের চেষ্টা করানো যেত। তা না করে সবাই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করলেন। আব্দুল মান্নান দিলেন। সুজন চক্রবর্তী দিলেন। এমনকি মুর্শিদাবাদ থেকে অধীর চৌধুরিও দিলেন। সেই প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও বুদ্ধিমত্তার তেমন ছাপ ছিল না।
বলা হতে লাগল, মানস ভুঁইয়াকে নির্দেশ দেওয়া হবে পদত্যাগের। পদত্যাগ না করলে সাসপেন্ড করা হবে। মানস ভুঁইয়াকে বয়কট করা হবে। প্রকাশ্যে এসব কথাগুলো না বললেই চলছিল না ? সেই রাতেই নালিশ চলে গেল হাইকমান্ডে। মঙ্গলবার অধীর এস এম এস পাঠালেন মানসকে। সেই এস এম এস মিডিয়ার কাছে ফাঁস হয়ে গেল। এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত না ? মানসকে প্রাপ্য সম্মান দিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বললে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত ? সঙ্গে সঙ্গে প্রেস কনফারেন্স করে সস্তা বাহাদুরি দেখাতেই হবে ? যে সমস্যাটা নিজেরা মেটাতে পারতেন, সেখানে হাইকমান্ডের দ্বারস্থ হওয়া কি খুব জরুরি ছিল ? কবে আর সাবালক হবেন ?