ময়ূখ নস্কর
একটি জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকার চলতি সপ্তাহের প্রচ্ছদকাহিনী ‘ভারত কি পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেবে?’ বইটির ভিতরে কী আছে জানি না। তবে অনুমান করা যায়, এখানে ভারত এবং পাকিস্তানের সামরিক শক্তির কথাই বলা হয়েছে। দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলে কে কাকে উচিত শিক্ষা দেবে, জানি না। কিন্তু এটা জানি, সামরিক শক্তি ছাড়াও একটি দেশের আরও কিছু শক্তি থাকে। সভ্যতার শক্তি, মানবতার শক্তি, শুভবুদ্ধির শক্তি। সেই শক্তির লড়াইয়ে ভারত সত্যিই পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিল।
ভারত এবং পাকিস্তান ঐতিহাসিকভাবে একই সভ্যতার অন্তর্গত। কিন্তু দেশভাগ হওয়ার পর থেকেই দুটি ভূখণ্ডের গতিপথ আলাদা হয়ে গেছে।অনেক ভুলত্রুটি সত্ত্বেও ভারত এগিয়ে চলেছে উন্নয়নের পথে। আর পাকিস্তান যুদ্ধবাজ, সন্ত্রাসবাদীদের মদতদাতা হিসেবে নিজেকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। সংবাদমাধ্যম থেকে যা জানা যায়, পাকিস্তানের পাকিস্তানের গণতন্ত্র ব্যাপারটাই সুদৃঢ় হয়নি। সেখানে ভোটে মূল বিষয় ভারত বিরোধীতা। যে যত ভারত বিরোধী কথা বলবে, সে তত ভোট পাবে। কিন্তু ভারতের ভোটে জাতপাত, ধর্ম ইত্যাদি থাকলেও মূল ইস্যু উন্নয়ন। মানুষ মনমোহন সরকারকে ছুঁড়ে ফেলে নরেন্দ্র মোদিকে ক্ষমতায় এনেছিল, কারণ তারা উন্নয়ন চেয়েছিল।
কিন্তু এবার বিহার ভোটে প্রচার দেখে মনে হচ্ছিল, ভারতও পাকিস্তান হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, এই সবের থেকেও বেশি প্রাধান্য পাচ্ছিল কে কী খাবে, সেই প্রশ্ন। এবং ডাইনি খোঁজার মতো পাকিস্তানের চর খোঁজার প্রবনতা। যে বিরুদ্ধমত পোষণ করবে, সেই দেশদ্রোহী। সেই পাকিস্তানের এজেন্ট। তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া উচিত- যেন দেশটা কারও বাবার জমিদারি।
ভারতের এই অবস্থা দেখে সবথেকে খুশি হচ্ছিল পাকিস্তান এবং তাদের মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। ভারতে উগ্রতা বাড়লে সবথেকে সুবিধা তাদের। কষ্ট করে আর ভারত বিরোধী প্রচার করতে হবে না। ভারত নিজেই নিজেকে ‘আরেকটি পাকিস্তান’ প্রমাণ করে দেবে। এই কারণেই মওকা বুঝে হাফিজ সঈদের মতো জঙ্গি ভারতকে খোঁচা দিয়ে বলেছিল, ভারতে অসুবিধা হলে পাকিস্তানে চলে আসুন। তারা আশায় আশায় ছিল, ভারতের গণতন্ত্রেও মূল ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে ধর্ম এবং পাকিস্তান বিরোধীতা।
কিন্তু বিহারের ভোটাররা বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারত আর পাকিস্তান এক নয়। কোনও কারণ ছাড়া পাকিস্তানের জুজু দেখিয়ে গরু-শুয়োরের গল্প শুনিয়ে, ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে এখানে ভোটে জেতা যাবে না ( এক আধবার হলেও হতে পারে।কিন্তু বারবার সম্ভব নয়)। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে যে দল উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়েছিল, তারাই জয়ী হয়েছিল। ২০১৫-র বিহার ভোটেও যারা উন্নয়নের কথা বলেছে, তারাই জিতেছে।
নিশ্চিত থাকুন, এই ফলাফল দেখে পাকিস্তানে হাফিজ সঈদদের মুখ শুকনো হয়ে গেছে। ভারতের মানুষ নিজেদের মধ্যে লড়াই করলে তাদের অনেক সুবিধা হত। ভারতের উন্নয়ন থমকে যেত। আভ্যন্তরীন গোলমাল থামাতে গিয়ে সীমান্ত অরক্ষিত হত। বলা যায় না, হয়ত ভারত ভেঙেও যেত। কিন্তু ভারতের মানুষ পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। সভ্যতার শিক্ষা, মানবতার শিক্ষা, শুভবুদ্ধির শিক্ষা।
ভারতের শুভবুদ্ধি চিরস্থায়ী হোক।