আনন্দবাজার মানেই যেন বাঙালির বাইবেল। তারা যা লিখবে, সেটাই যেন শেষ কথা। এতদিন পুঁজিবাদের হয়ে গলা ফাটানো একটা কাগজ। কিন্তু এদের থেকে তো চটকলও ভাল। সেখানেও এভাবে শ্রমিক ছাঁটাই হয় না। পুঁজিবাদের নগ্নরূপটা কেমন, সেটাও দেখা গেল। লিখেছেন রাহুল বিশ্বাস।।
পুঁজিবাদের নাম শুনলে অনেকের জিভ থেকে লালা ঝরে। পুঁজিবাদের পথে চললে দেশ সুজলাম সুফলাম হয়ে উঠবে এমন একটা প্রচার দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। কিন্তু পুঁজিবাদের আসল চেহারা কী সেটা বুঝিয়ে দিল আনন্দবাজার পত্রিকা।
আনন্দবাজার পত্রিকা এই রাজ্যে পুঁজিবাদের সবথেকে বড় প্রচারক এবং সমর্থক। তারা বেসরকারিকরনের জয়গান গেয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগের জয়গান গেয়েছে, কখনও মনমোহন, কখনও ব্র্যান্ড বুদ্ধ, কখনও টাটা, কখনও মোদীর জয়গান গেয়েছে। এবং যে সরকার খুল্লামখুল্লা পুজির পথে পা বাড়ায়নি, উদয়াস্ত তাকে গাল পেড়েছে। কিন্তু পুঁজির দালালি করতে গিয়ে আনন্দবাজারের নিজের অবস্থা কী হয়েছে? গত কয়েক মাসে আনন্দবাজারের প্রায় দেড় হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন, শোনা যাচ্ছে আরও হবে। কলকাতার বাইরের সব ব্যুরো অফিস নাকি বন্ধ করে দেওয়া হবে, ‘দেশ’ ছাড়া আনন্দবাজার গোষ্ঠীর আর সব পত্রিকা নাকি বন্ধ হয়ে যাবে।
পুঁজিবাদ যদি এতই ভালো তাহলে পুঁজিবাদের পূজারী আনন্দবাজারের এই হাঁড়ির হাল কেন? যদি বলেন লোকসান হচ্ছিল তাহলে প্রশ্ন উঠবে, লোকসানের দায় কার? অবশ্যই মালিকপক্ষের। তাঁরা কোঁচানো ধুতি পরেছেন, হাভানার চুরুট, বলিভিয়ার কফি খেয়েছেন, মালিকের স্ত্রী আর্ট গ্যালারি খুলেছেন আর কাগজটাকে ডুবিয়েছেন। তাঁদের ব্যর্থতার দায় নিয়ে কর্মহীন হয়েছেন ১৫০০ মানুষ।
খবরের কাগজে চাকরি যাওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে কাগজ বন্ধ হয়ে গেলে চাকরি যায়। শুধু কাগজ কেন? একটা চটকলেও চাকরি তখনই যায় যখন কারখানা ধুঁকতে থাকে। আনন্দবাজারের ক্ষেত্রে পুরো উল্টো। এখনও বাঙলার ১ নম্বর কাগজ। যদি মনে হয় বিক্রি কমছে, তাহলে বিক্রি বাড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লাগাই যায়।
কিন্তু আনন্দবাজার সেই সহজ পথটাই বেছে নিয়েছে, যেটা পুঁজিবাদীদের সবথেকে প্রিয়। অর্থাৎ কর্মী ছাঁটাই। লোকসান কমানোর ইচ্ছা থাকলে আগে মালিকদের বাবুগিরি বন্ধ হত। সেরা বাঙালি, আনন্দ পুরস্কার, খাইবার পাশ ইত্যাদি হরেক ফেরেব্বাজি বন্ধ হত। কিন্তু নিশ্চিত থাকুন হবে না। কারণ তারা লাভ করতে চায়। আরও আরও লাভ। তাঁর জন্য কর্মীদের পেটে লাথি মারতেও কসুর করে না।
এটাই পুঁজির আসল চেহারা। ভয়ঙ্কর চেহারা। গণশক্তিতে কর্মীরা কম মাইনে পায়, কিন্তু এই ভাবে ছাঁটাইয়ের কথা কখনও শুনেছেন? বর্তমান বা প্রতিদিন বামপন্থী নয়। কিন্তু তারা কাছা খুলে পুঁজিবাদের দালালিও করে না। সেখানে ছাঁটাইয়ের খবর শুনেছেন? আজকালের ‘খেলা’ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ছাঁটাইয়ের খবর শুনেছেন?
আনন্দবাজারের কাছে অনুরোধ, দয়া করে এবার থেকে বেকারি, চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চনা, অভাবের জ্বালায় আত্মহত্যা ইত্যাদি নিয়ে সরকারকে জ্ঞান দেবেন না। হাজার দেড়েক মানুষের পেটে লাথি মারার পর এই সব লেকচার আপনাদের মুখে মানায় না।