স্বরূপ গোস্বামী
যে কোনও সহজ বিষয়কে জটিল করতে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর সত্যিই জুড়ি নেই। একেবারে সাম্প্রতিকতম নমুনা হল বিমান বিভ্রাট। যথারীতি আবার তাঁর দাবি, তাঁকে নাকি খুন করার চক্রান্ত হয়েছিল। তিনি সরাসরি ক্যামেরার সামনে বলেননি। কিন্তু রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম গলা হাঁকিয়ে চিৎকার করে চলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে খুন করার চক্রান্ত হয়েছিল।
কে চক্রান্ত করেছিলেন ? কেন চক্রান্ত ? কারণ, তিনি নোট বাতিল নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন । তাহলে, কে চক্রান্ত করল ? আগে এসব ক্ষেত্রে তিনি সিপিএমের নাম টেনে আনতেন। এখন সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস, নির্বাচন কমিশন, সিবিআই— সবার নাম একসঙ্গে জুড়ে দেন। কোনদিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামও এই তালিকায় এসে যেতে পারে।
কীভাবে খুনের চক্রান্ত ? কেন, বিমানের জ্বালানি শেষ করিয়ে দিয়ে। মোদি তো আর বিমান চালান না। কোন বিমান কোন রানওয়েতে নামবে, তাও ঠিক করেন না। তাহলে এই ‘খুনের চক্রান্তের’র সঙ্গে বিমানবন্দরের অনেক কর্মী যুক্ত আছেন। পাইলট তো অবশ্যই যুক্ত আছেন। যে বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে ধাক্কা মেরেছিল, তার পাইলটরা জানতেন মৃত্যু নিশ্চিত। তাও তাঁরা বিমান নিয়ে গিয়ে সোজা ধাক্কা মেরেছিলেন।
বোঝা গেল, আমাদের ইন্ডিগোর পাইলটও আত্মঘাতী জঙ্গি। নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে খুনের ষড়যন্ত্র করছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরা নিশ্চয় এমন তত্ত্বেই বিশ্বাস করেন।
সত্যি করে বলুন তো, যাঁরা এরপরেও খুনের ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন, তাঁদের সুস্থ মানুষ বলা যায় ?
মুখ্যমন্ত্র্রীর রাগ, জ্বালানি কম ছিল, সেটা কেন তাঁকে জানানো হয়নি ? জানলে আপনি কী করতেন ? বিমানবন্দর সূত্রে পরে যা জানা গেল, তেমন কোনও সমস্যাই হয়নি। এটা অতি সাধারণ একটা ঘটনা। সেটাকে অহেতুক রঙ চড়িয়ে জটিল করা হচ্ছে। অনেক সময়ই রানওয়ে খালি থাকে না। তখন আকাশেই কিছুক্ষণ চক্কর দিতে হয়। নইলে পার্শ্ববর্তী অন্য কোনও বিমান বন্দরে নামাতে হয়। সারা পৃথিবীতেই এমনটা ঘটে। এই বাংলাতেও খুব কম করে হলেও হাজারবার এমনটা ঘটেছে। কেউ কখনও চক্রান্ত বা খুনের ষড়যন্ত্র বলেননি।
প্রথম কথা, যদি জ্বালানি কমে যায়, মুখ্যমন্ত্রী জানলেই বা কী করতেন ? মদন মিত্র বা অরূপ বিশ্বাসকে বলতেন তেল আনতে? ওই পরিস্থিতিতে কী করতে হয়, সেটা তিনি কি পাইলটের থেকে ভাল জানেন ? যাত্রীরা জানলে অহেতুক প্যানিক তৈরি হত। কী জানি, মুখ্যমন্ত্রী হয়ত ককপিটে গিয়ে পাইলটকে জ্ঞান দিতে শুরু করতেন। হয়ত পুলিশ কমিশনারকে বলতেন রেড রোডে সব গাড়ি থামিয়ে দাও। তারপর হয়ত পাইলটকে বলতেন, রেড রোডে বিমান নামিয়ে দাও। তাঁর যা প্রতিভা, এমন পরামর্শ আসা অসম্ভব কিছু ছিল না।
কয়েকদিন আগেই উত্তর প্রদেশে আট লেনের একটি রাস্তা উদ্বোধন করতে গিয়ে রাস্তায় আটটি বিমান নামিয়েছিলেন অখিলেশ যাদব। দিদিমণিই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন ? হয়ত, তিনিও বায়না ধরতেন, রাস্তাতেই নামাতে হবে। তখন বেচারা পাইলট কী করতেন ?
অভিষেকের দুর্ঘটনা হল। তিনি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেলেন। তোলপাড় করে দিলেন। যাকে তাকে জেরা শুরু হয়ে গেল। এখানেও সাধারণ একটা বিমান বিভ্রাটকে ‘খুনের চক্রান্ত’ বলে ফেললেন। আগে না হয় বিরোধী নেত্রী ছিলেন। কিন্তু এখন আপনি মুখ্যমন্ত্রী। দোহাই, এই প্যানিক ছড়ানো বন্ধ করুন। কলকাতায় না নামলে বিমানটা কিন্তু রাঁচিতেই গিয়ে নামত।