রবি কর
ব্যর্থ চট্টোপাধ্যায় খুব ব্যস্ত মানুষ। মন্ত্রীর দপ্তরে গেলে শুনি দলের কাজে ব্যস্ত। আর ছিন্নমূল ভবনে গেলে শুনি, বালিঘাটে আছেন। আবার বালিঘাট গেলে শুনি সবান্নে গেছেন। সেখানে গিয়েও পাই না। শুনি তিনি নাকি ঢাকতলায়।
ইদানীং ফোনও ধরছেন না। পাছে সিবিআই আড়ি পাতে! এদিকে তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া খুব জরুরি। রবিবারে মোদি মাঝে মাঝে রেডিওতে বসেন। বলেন ‘মনকি বাত’। ব্যাকুল রায়ের সত্যাগ্রহ নিয়ে ব্যর্থবাবুর ‘মন কি বাত’টাও তো জানতে হবে। অবশেষে রবিবার, ছুটির দিনে সকালে পাওয়া গেল। রবিবারে রবি করের সঙ্গে শুরু হয়ে গেল ফোনের আড্ডা । কিছু বলতেই দিলেন না। নিজেই বলে গেলেন ‘মন কি বাত’।
আসুন, একটু শুনে নেওয়া যাক।।
কত আশা ছিল, ৩০ জানুয়ারি, গান্ধীজির প্রয়াণ দিবসেই ব্যাটা শহীদ হবে। শহীদ মানে, একেবারে মরে যাবে না, কিন্তু জেলে যাবে। আর কেউ শহীদ হলে সবাই যা করে, ছবিতে মালা দিয়ে ‘অমর রহে’, ‘অমর রহে’ স্লোগান দেয়, আমরাও তাই করব। ব্যাটা জেলে যেত, আর আমরাও দিল্লির গোয়েন্দাদের চক্রান্ত বলে শোর মচিয়ে দিতাম। অনেককে রাস্তায় নামিয়ে দিতাম।
কত আশা ছিল, ৩০ জানুয়ারি, গান্ধীজির প্রয়াণ দিবসে, দিল্লির গোয়েন্দারা একেবারে নাথুরাম গডসের মতো, না বুকে নয়, কিন্তু রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষায়, ঠাঁই- ঠাঁই করে গুলি চালিয়ে দেবে। নাথুরাম তো বি জে পি-র লোক, আর গোয়েন্দাগুলোও তাই, যাকে বলে বি জে পি-র ফ্রন্টাল অর্গানাইজেশন। আজকের দিনে ওরা কি ছেড়ে কথা বলবে ?
ও মা! দেখি মাত্র ৪ ঘণ্টা পরেই ব্যাটা সুড়সুড় করে বাইরে চলে এল। এসে আবার হাসিমুখে টিভিতে ভাষণ দিল। কি না, তদন্তে সহযোগিতা করছে। মাইরি, গান্ধীজীর প্রতি একটুও শ্রদ্ধা নেই! আজকের দিনে, গান্ধীজীর প্রয়াণ দিবসে কেউ সহযোগিতা করে? জানিস না, গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন? অবশ্য জানবি কী করে, ছিলিস তো রেলের ওয়াগন… থুড়ি মন্ত্রী?
আসলে ব্যাটা একটুও অহিংস নয়। বুক ভরতি আমার প্রতি হিংসা। যবে থেকে দলে ঢুকেছে, আমার পিছনে লেগেছে। আমি ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি রাখলে ও-ও রাখবে। আমি ডক্টরেট করছি দেখে তারও শখ হল ডিগ্রি বাড়াবে। একবছর আগেও জানতাম, হায়ার সেকেন্ডারি পাস (নিজেও সেটাই লিখত)। হঠাৎ দেখি লিখে ফেলেছে এম এ। কবে ভর্তি হল, কবে পরীক্ষা দিল, কবে পাস করল, স্বয়ং ভগবানও জানে না। হায়ার সেকেন্ডারি থেকে গ্র্যাজুয়েশন না করে সরাসরি এম এ করা যায় ? আমি দীক্ষামন্ত্রী হলেও এমন নিয়মের কথা বাপের জন্মে শুনিনি বাপু।
আমি পাঞ্জাবি-পাজামা পরলে সে-ও তাই পরবে। জ্বালার চোটে আমি সাদা পাঞ্জাবি পরাই ছেড়ে দিলাম। দুনিয়া সুদ্ধু লোক জানে, আমি হলাম মহাসচিব। শুধু সচিব নয়, ম-হা-স- চি-ব। তাঁর মানে আমিই দলের দু’নম্বর। (খাতায় কলমে অবশ্য আমি একনম্বর। কারণ মহাসচিবের উপরে আর কিছু হয় না। কিন্তু একথা তো আর মুখে আনা যায় না। জানতে পারলে মহাসচিবকে মহানদীর জলে চুবিয়ে মারবে।)
তা যাই হোক, মোট কথা, দীর্ঘদিন ধরেই আমি হলাম দলের আসল দু’নম্বর। কিন্তু ওই কাঁচড়াপাড়ার ছ্যাঁচড়াটা এসে ইস্তক কী জাদু করেছে কে জানে, সবাই মিলে ওকেই, ‘দু’নম্বর’ ‘দু’নম্বর’ বলে মাথায় তুলে নাচছে। ব্যাটা দু’নম্বর তো বটেই, এক নম্বরের দু’নম্বরি মাল। জালি। আমাদের দলের সকলের একমাত্র অ্যাম্বিশন হল দু’নম্বর হওয়া। ওর জ্বালায় সেটাও হতে পারছি না।
যেদিন প্রথম ওকে গোয়েন্দারা ডাকল, কী আনন্দ যে হয়েছিল! মনে মনে কত ডেকেছিলাম, মা-গো, মা দুর্গা! নাকতলায় প্রতিবছর ঘটা করে তোমার পূজা করি মা, দুর্গা, ওই নকল দু’নম্বরটাকে ভালো করে ফাঁসিয়ে দাও মা। কিন্তু মনের কথা তো মুখে বলা যায় না, মানে আমাদের দলে তো নেত্রী কী ভাবছেন তা না জেনে কিছু ভাবাও বারণ, তাই টিভিতে জ্বালাময়ী ভাষণ দিলাম, বললাম, একটা দু’নম্বর গেলে লক্ষ দু’নম্বর পথে নামবে। মনে কত আশা নিয়ে বলেছিলাম, ও ব্যাটা জেলে গেলে, আমার নেতৃত্বে মহামিছিল হবে, তখন নেত্রী বুঝবে আসল দু’নম্বর কে?
মুশকিল হল, এই কোর্ট-ফোর্ট করতে গিয়ে ব্যাটার জেরার দিন পড়ল ৩০ জানুয়ারি, গান্ধীজির প্রয়াণ দিবস। এই দিনে ব্যাটা যেন সত্যাগ্রহ শুরু করেছে। বলছে, ‘আমিও চাই সত্য উদ্ঘাটিত হোক।’ তোর সত্য উদ্ঘাটন বের করছি, দাঁড়া! শুনছি না কী কয়েকদিনের মধ্যেই গোয়েন্দারা আবার ডাকবে। মা-মা গো, সে দিনও যেন সত্যি বলার রোগটা বজায় থাকে। ব্যাটা যাবে কোথায়? মিথ্যে বললে জেলে বন্ধ, আর সত্যি বললে দল থেকে অর্ধচন্দ্র। আমার দু’নম্বর হওয়া ঠেকায় কে?
রবি করঃ কিন্তু ব্যর্থদা, ভাইপো থাকতে আপনি দু’নম্বর…?
ব্যর্থবাবুঃ এখন রাখি ভাই, দেওয়ালেরও কান আছে।
(বিধিসম্মত সতর্কীকরণঃ সব চরিত্র কাল্পনিক)
পুনশ্চঃ রবি কর কাল্পনিক বললেই আপনাকে তা বিশ্বাস করতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।