ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে একটি মূর্তি। ঋষি অরবিন্দর। ওই মূর্তি ওই পরিবেশে কতটা মানানসই ? ওই মূর্তি কি আদৌ অরবিন্দের মর্যাদা বাড়াচ্ছে ? ঋষি অরবিন্দের জন্মদিনে এই প্রশ্ন তুললেন রাহুল বিশ্বাস।।
বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মান জানানোর জন্য তাঁদের মূর্তি বসানোর রোগটা আমরা ইউরোপীয়দের থেকে পেয়েছি। মনীষীদের কীর্তি নিয়ে মাথা ঘামাতে গেলে বিস্তর ঝঞ্ঝাট। তাই, রাস্তার ধারে মূর্তি বসিয়ে আমরা শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের দায় সেরে ফেলি। ব্রিটিশদের ওপর আমাদের যতই রাগ থাক, তাঁদের বসানো মূর্তিগুলো কিন্তু দেখতে ভালো ছিল। তুলনায়, স্বাধীনতার পড়ে কলকাতার বুকে যে সব মূর্তি বসানো হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই চোখে দেখা যায় না। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে, রাস্তার ওপরে, শ্রী অরবিন্দের যে মূর্তিটি আছে, সেটিও এর ব্যতিক্রম নয়। ওটি মূর্তি না ‘মোচার খোলা’? শ্রী অরবিন্দের সম্মান রক্ষার্থে, অবিলম্বে মূর্তিটিকে ওখান থেকে সরানো উচিত।
প্রথমতঃ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ভিতরে বা প্রবেশপথের সামনে কোনও দেশপ্রেমিকের মূর্তিই বসানো উচিত নয়। ভিক্টোরিয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রতীক। সেখানে যত মূর্তি আছে, সবই ব্রিটিশ রাজপুরুষদের। শ্রী অরবিন্দর মূর্তিটি যেখানে আছে, সেখানেও আসলে এক ব্রিটিশ সাহেবের মূর্তি ছিল। স্বাধীনতার পর মূর্তিটি সরানো হলেও মূর্তির বেদিটি সরানো হয়নি। ফলে সেই বেদিকে ঘিরে থাকা সাহেবি আমলের ছোট ছোট মূর্তিগুলো এখনও রয়ে গেছে। সেই মূর্তিগুলোর কোনটা কৃষকের, কোনটা বণিকের, কোনটা দুর্ভিক্ষ পীড়িত প্রজার। এমন বেদির উপরে কোনও শাসকের মূর্তিই মানায়। শ্রী অরবিন্দের মতো বিপ্লবী সাধক সেখানে কী করছেন?
একে তো ব্রিটিশ আমলের বেদির উপরে স্বদেশি নেতার মূর্তি বসিয়ে এক বকচ্ছপ-মার্কা ব্যাপার হয়েছে। তার ওপর মূর্তিটির গুণগত মান অতি বাজে। এক কথায় মূর্তিটিতে কোনও শিল্পগুণই নেই। মুখে বা শরীরে কোনও অভিব্যক্তি নেই। দেশপ্রেম, চারিত্রিক দৃঢ়তা, আধ্যাত্মিকতা কোনও কিছুই ফুটে ওঠেনি। কুচকাওয়াজের ‘অ্যাটেনশন’ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন শ্রী অরবিন্দ। হাত দুটো কোমরের কাছে জড়ো করে। দেখে মনে হয়, দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ প্রভুর সামনে হাত কচলাচ্ছেন। এমন মূর্তি স্থাপন করে কি শ্রী অরবিন্দের সম্মানবৃদ্ধি হয়েছে?
অথচ বেদিমূলের মূর্তিগুলো রীতিমত সুন্দর। ভিক্টোরিয়ার ভিতরের সাহেবদের মূর্তিগুলোও উচ্চমানের। এই সব মূর্তির মধ্যে শ্রী অরবিন্দের মূর্তিটি দেখলে, বিদেশি পর্যটকদের মনে ভারতীয় শিল্পকলা সম্বন্ধে খারাপ ধারনা হতে বাধ্য। তাই ভারতের সমস্ত
অরবিন্দ ভক্তের উচিত, অবিলম্বে ওই মূর্তিটি সরানোর দাবি জানানো। ওই জায়গায় ব্রিটিশ আমলের মূর্তিটিকে আবার বসালে সেটাই ভিক্টোরিয়ার পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
শ্রী অরবিন্দের একটি সুন্দর মূর্তি নির্মাণ করে, সেটিকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হোক।