রবি কর
চোখ জুড়িয়ে গেছিল গো দিদি! জুড়িয়ে গেছিল!
ভুটানের কথা বলছিলাম। লোকে বলে ভুটানের প্রকৃতি না কি খুব সুন্দর। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। আমি অবশ্য ভুটান দেখতে চাই না। দিদি বলেছেন, কলকাতাকে লন্ডন, দার্জিলিংকে সুইজারল্যান্ড, কাটোয়াকে পাটায়া, সিঙ্গুরকে সিঙ্গাপুর বানিয়ে দেবেন- অকারণে ভুটান গিয়ে পয়সা খরচ করব কেন?
তবু, মিথ্যে কথা বলব না, দিদিমণি ভুটান যাবেন শুনে, আমার মনে একটা আশা দেখা দিয়েছিল। দিদি ভুটানে যাচ্ছেন, হয়তো আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। এর আগে লন্ডন, সিঙ্গাপুরে চান্স পাইনি, এবারে হয়তো পাব। কত সাংবাদিকই তো পায়।এতদিন ধরে বেঙ্গল টাইমসে এত কলাম লিখলাম। মাথামোটা এডিটর বলে, ‘রবিবাবু আপনার তো অনেক পাঠক তৈরি হয়েছে। আরও ভাল লিখুন, তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন। আর সাংবাদিকতায় মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী না হলে জাতে ওঠা যায় না।’ ভুটান নিয়ে গুগল থেকে কত পড়াশোনা করলাম। পল্টুর মামা ভুটান গিয়েছিল। তার কাছে কত গল্প শুনলাম। ভাবলাম, দিদিকে এমন কিছু পরিকল্পনা দেব, সব সফরেই আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, এবারেও আমার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল না। তাই যে কথা দিদিকে চুপি চুপি বলব বলে ভেবেছিলাম, তার কিছুটা প্রকাশ্যেই বলি।যদি দিদির নজরে পড়ে। যদি পরের সফরে আমাকে সঙ্গে নেন!
আমাদের অফিসের বিপিনবাবু, একবার ভুটান থেকে একটা চায়ের কাপ নিয়ে এসেছিল। সেই ছবি দেখে চোখ জুড়িয়ে গেছিল। এমনিতে সাধারণ কাপ। কিন্তু তার গায়ে রাজা আর রানির চুমু খাওয়ার ছবি। ভুটানের নাকি এটাই রীতি। প্রতিটি দোকানে, অফিসে, বাড়িতে, স্কুলে রাজা রানির ছবি থাকতেই হবে। লোকে হাসি মুখে এই রীতি মেনেও নিয়েছে।
হ্যাঁ দিদি। আমদের রাজ্যেও এমনটা চালু করলে হয় না! নবান্নে একটা অলিখিত বিধি আছে। সবাইকে আপনার ছবি টাঙাতে হয়। মহাকরণ, নিউ সেক্রেটারিয়েট, বিকাশ ভবন, খাদ্যভবন- এমন অনেক সরকারি ভবনে এই রীতি। কিন্তু পল্টুর চায়ের দোকানে কেন এই নিয়ম থাকবে না? মন্ত্রীরা ছবি টাঙাতে পারছে, আমরা কেন টাঙাবো না ? এমনকি আলিমুদ্দিনেই বা থাকবে না কেন ? সেটা কি রাজ্যের বাইরে? সিএবি, আইএফএ, নিউমার্কেট থেকে শ্মশানঘাট, সব জায়গায় আপনার ছবি থাকুক।
আপানার সঙ্গে কারা ভুটানে গেছেন ? মন্ত্রীদের মধ্যে গেছেন অরূপ বিশ্বাস। তাঁর মাথায় এখন ঘুরঘুর করছে সুরুচি সঙ্ঘের পুজো। তাঁকে কিনা আপনি জোর করে ধরে নিয়ে গেলেন। আছএন উত্তরবঙ্গের গৌতম দেব। তিনি ভাবছেন, মহকুমা পরিষদেও যদি হারতে হয়, তাহলে তাঁর চাকরি যাবে। যে আমলারা গেলেন, তাঁরা ভাবছেন ভুটান থেকে বউয়ের জন্য কী শাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। বলুন তো, এঁরা আপনাকে কী পরামর্শ দেবেন! আমার মতো পরামর্শ আপনাকে কেউ দিতে পারবে!
এমনিতেই আপনি ভুটান থেকে বিনিয়োগ আনতে গেছেন বলে নিন্দুকেরা হাসাহাসি করছে। বলছে, ভুটানের অধিকাংশ শিল্পই ভারতীয়দের হাতে। ভুটান থেকে উনি আবার কী বিনিয়োগ আনবেন?
নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে আপনি এই ছবি-শিল্পে বিনিয়োগ নিয়ে আসুন। চালু করলে আদালতকে বেশ কাঁচকলা দেখানো যাবে। আদালত তো আমাদের পিছনে সব সময় খড়গহস্ত হয়েই আছে।
দুঃখ একটাই, ওখানে কেমন রাজা রানি দুজনের ছবিই থাকে………। তা হোক আপনিই গরিবের বাপ, আপনিই গরিবের মা। আপনার একার ছবিতেই আমরা দুইয়ের রূপ দেখতে পাব।
হ্যাঁ, কিছু লোকে বলবে, ভুটানে রাজতন্ত্র আছে। তাই এসব হয়। গণতন্ত্রে এসব হয় না। কেন হয় না শুনি? পশ্চিমবঙ্গে গত চার বছরে রাজতন্ত্রের বাকি কী আছে? গণতন্ত্রে কত ঝামেলা দেখছেন তো। সাংবাদিকরা মার খায়, বাইক-বাহিনী বেরোয়- গণতন্ত্র মানেই আইন শৃঙ্খলার অবনতি। অর্থনীতির ক্ষতি।
তাই ভুটান থেকে অন্য বিনিয়োগ আনতে হবে না। একেবারে রাজতন্ত্রটাকেই এনে হাজির করুন। আর কিছু না হোক। দেশে একটু শান্তি বজায় থাকুক। আর রাজ্য জুড়ে চায়ের কাপে, ফুলদানিতে, ক্যালেন্ডারে, পাঠ্যপুস্তকে সর্বত্র বজায় থাকুক আপনার ছবি।
আর যে লোকের বাড়ি বা দোকানে ছবি থাকবে না, সহজেই চিহ্নিত হবে যে সে বিরোধী। তখন তাঁর বাড়িতে তাপস পাল, কেস্টা, আরাবুল, সুজিত পরেশ- এসব বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা পৌঁছে যাক। একেবারে ভুটানি ড্রাগনের মতো……