রক্তিম মিত্র
বোধ হয় এমনটাই হওয়ার ছিল। চিত্রনাট্য বোধ হয় সেভাবেই লেখা হয়েছিল। যা হল, তাতে একটা প্রবাদই মনে পড়ে, পর্বতের মুষিক প্রসব।
সারা বিধান নগর জুড়ে সন্ত্রাস। টিভি ফুটেজে যা উঠে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। আর রাজারহাটে যা হয়েছে, তার কতটুকুই বা মিডিয়ায় এসেছে? আসানসোল, জামুরিয়া, রানিগঞ্জ বা কুলটিতে এত মিডিয়া কোথায় ? কিন্তু যা হয়েছে, তা বিধান নগরকে দেখেই বোঝা যায়।
ভোটের দিন কার কী ভূমিকা ছিল, সেটা তো পরিষ্কার। পুলিশ দেখেও দেখবে না। নির্বাচন কমিশন মৌনতা অবলম্বন করবে। এই দুই প্রতিষ্ঠানের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে পর্যবেক্ষক বা প্রিসাইডিং অফিসারদের ঘাড়ে কটা মাথা ? তাঁরা তো দেখছেন, তাঁদের উপরওয়ালারা কতটা নতজানু। তাঁরা তো বোঝেন, তাঁদের কাছ থেকে কী রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে।
পরিচ্ছন্ন ভোট করানোর ব্যাপারে সরকারের আদৌ কোনও সদিচ্ছা ছিল ? অন্য এলাকার বিধায়করা ঢুকে পড়লেন, শাসিয়ে গেলেন। হাজার হাজার বহিরাগত তিন দিন ধরে দাপিয়ে বেড়ালেন। ২১ জন সাংবাদিক মার খেলেন। কমিশন বা প্রশাসনের ভূমিকা কী ? নির্বাচনকে ঠিকঠাক সম্পন্ন করা যাদের দায়িত্ব, তাদের কেউ কি তা পালন করেছেন ? যেটুকু পালন করেছে, মিডিয়া।
কী আশ্চর্য, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বহিরাগত আর মিডিয়াকে এক আসনে বসিয়ে দিলেন। বলে বসলেন বহিরাগতরা যেমন ঢুকতে পারে না, তেমনি মিডিয়াও ঢুকতে পারে না। গ্রামের একজন সাধারণ পঞ্চায়েত সদস্য যে নিয়মগুলো জানেন, আমাদের শিক্ষামন্ত্রী তা জানেন না। তবু তিনি নামের আগে ডক্টর লেখেন। যাঁরা সত্যি সত্যি পি এইচ ডি করেছেন, তাঁরা এবার লজ্জায় ডক্টর লেখা ছেড়ে দেবেন। কারণ, তাঁদেরকেও লোকে মূর্খ ভাবতে পারে।
নির্বাচন কমিশনে গিয়ে কী কান্ডটাই না করলেন! সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চলল শাসানি। ভেতরে কী বলেছেন, জানা নেই। কিন্তু বাইরে কী হুমকি দেওয়া হল, সে তো টিভির কল্যাণে সবাই শুনেছেন। ভাবতে পারেন, একজন শিক্ষামন্ত্রী এই ভাষায় কথা বলেন ! ইনি উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন! ইনি শিক্ষানীতি নির্ধারণ করবেন!
বেচারা সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। এমন নির্যাতনের শিকার তিনি কখনও হননি। দেশের কোনও রাজ্যের কোনও নির্বাচন কমিশনারকে সম্ভবত এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। কী আর করবেন? সরে দাঁড়ালেন।
এই হল আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচন কমিশনার হওয়ার পটভূমি। কেন তাঁকে বসানো হয়েছিল, বোঝাই যাচ্ছে। পরের দিনই তড়িঘড়ি করে ঘোষণা করে দিলেন নির্বাচনের দিন। শোনা যায়, অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে নাকি ঘোষণা করতে হয়। আলাপনবাবু পুনর্নির্বাচনের কথা ঘোষণা করলেন বিকেল সাড়ে তিনটেয়। পরের দিন সকাল সাতটা থেকে ভোট। তাঁর যুক্তি, আমরা সকাল থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আর ভোটারদের বুঝি প্রস্তুতি বলে কিছু থাকতে নেই! ধরা যাক, যে মানুষটা অফিসের কাজে শিলিগুড়ি বা পুরুলিয়ায় গেছেন, তিনি কখন জানবেন ? কখন ফিরবেন, কখন ভোট দেবেন ?
এত এত ওয়ার্ডে পুনর্নির্বাচনের দাবি। অথচ, ভোট হবে মাত্র ৯ টিতে। রাজারহাটের কোনও বুথই তালিকায় নেই ? আসানসোলে মাত্র দুটি বুথ ? এও আরেক প্রহসন।
ভোটে কী হবে? বাইরের বাহিনী হয়ত আগের মতো দেখা যাবে না। অনেকে হয়ত ভয়ে ভোট দিতেও আসবেন না। আশা করা যায়, নিরপেক্ষতার মুখোশটুকু অন্তত থাকবে। এই নটি বুথ অন্তত রায় দিক। বুঝিয়ে দিক, ঠিকঠাক ভোট হলে কী হতে পারত।