(বেঙ্গল টাইমসের নতুন ফিচার- নন্দ ঘোষের কড়চা। একেকদিন একেকজনকে বেছে নিচ্ছেন নন্দ ঘোষ। এতদিন সবাই সবকিছুতেই তাঁর দোষ দেখত। এবার নন্দ ঘোষ বেরিয়ে পড়লেন অন্যের দোষ খুঁজতে। আজ তাঁর টার্গেট মীরাক্কেলের সঞ্চালক মীর। )
যারা হাস্যরস পরিবেশন করেন তাঁদের দুটি দলে ভাগ করা যায়। একদল হল রসিক আরেকদল দল ভাঁড়।
রসিকের উদাহরণ হল বীরবল এবং মোল্লা নাসিরুদ্দিন। এঁদের কাজকর্মের মধ্যে উপস্থিতবুদ্ধি, কথার মারপ্যাঁচ দেখা যায়। এঁদের হাসিকে কখনও অসহ্য বলে মনে হয় না।
অপরদিকে ভাঁড়ের উদাহরণ হলেন গোপাল ভাঁড়। এঁর কাজকর্মের মধ্যেও উপস্থিত বুদ্ধি আছে। কিন্তু হাসির বিষয়গুলি প্রায়শই নোংরা। কে হাগল, কে পাদল, কোন জামাই শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরল। এই সব জোকস অল্প বুদ্ধির মানুষদের এবং স্কুলের নিছু ক্লাসের বাচ্চাদের ভালো লাগে।
কিন্তু বড় হওয়ার পর মানুষ বুঝতে পারে আসল হাসি লুকিয়ে আছে বীরবল এবং মোল্লা নাসিরুদ্দিনের মধ্যে। তাই লোকে বীরবলকে বলে রসিক বীরবল, আর গোপালকে বলে ভাঁড়।
আমাদের মীরবাবুকে এতকাল রসিক বলেই জানতাম। অসম্ভব সেন্স অফ হিউমার। কথার জাল বুনে মানুষকে হাসানো তাঁর বাঁ হাতের খেলা ছিল। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ভাঁড় থেকে রসিক হয়, আর আমাদের মীরবাবু উল্টোটা হচ্ছেন। এখন তাঁর কথা শুনে লোকে হাসে না, তিনি নিজেই হাসেন।
মীরাক্কেল নামে অনুষ্ঠান নিয়ে যা শুরু করেছেন তাতে নির্দ্বিধায় বলা যায় গোপাল ভাঁড়ের পরে বাংলায় আরও একজন ভাঁড়ের আবির্ভাব হয়েছে মির ভাঁড়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রসবোধ বাড়ে। মীরের যেন কমছে। যত দিন যাচ্ছে তত ছ্যাবলা হচ্ছেন তিনি।
প্রথম প্রথম মীরাক্কেল ভালোই লাগত। সপরিবারে দেখা যেত। কিন্তু একটু একটু করে আদিরস শুরু হল। তার পর শুরু হল মীরের অসহ্য বাতেলা। সঞ্চালকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগীরাও ভাঁড়ামো শুরু করল। টিভিতে মুখ দেখানোর এমন লোভ যে ডাক্তার মক্তার সবাই নিজের কাজকর্ম ছেড়ে এই দাঁত কেলানে অনুষ্ঠানে নাম লেখাচ্ছেন।
সঙ্গে মীরের স্বরচিত গান, অসম শালা অসম শালা। হৈমন্তী শুক্লার মতো গায়িকা বিচারকের আসনে বসে সেইসব গান শুনলেন ? বুদ্ধির কোনও ছাপ নেই। জাস্ট তৃতীয় শ্রেণির ভাঁড়ামো। রজতাভকে বুদ্ধিমান বলে জানতাম। কিন্তু এপিসোডের পর এপিসোড বিচারকের আসনে তাঁকে দেখে অবাক লাগে।
বেশ কিছু দিন বিরতির পর আবার মীরাক্কেল শুরু হয়েছে। কেমন হচ্ছে জানি না। দেখতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু বিজ্ঞাপনে দেখি মিরের চোখে হলুদ চশমা। আর কী ছড়া! “হাসির টোটোয় ফুলটু পাওয়ার, মিরাক্কেলের পাড়ায় সওয়ার।” এর নাম ছড়া ! এর নাম রসিকতা!
মীরের কত সুন্দর বুদ্ধিদীপ্ত মুখ চোখ ছিল। কিন্তু এখন গাল হাঁ করে কিম্ভূত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। নির্ভেজাল ভাঁড়। মীর তো মাঝে মাঝে অভিনয় করেন। কোনও পরিচালক গোপাল ভাঁড়কে নিয়ে সিনেমা করলে চোখ বুজে মীরকে নিতে পারেন। খুব ভালো মানাবে।
(এটি লিখেছেন রাহুল বিশ্বাস। চাইলে আপনিও নন্দ ঘোষ হয়ে উঠতে পারেন। যাকে ইচ্ছে, তাকেই কাঠগড়ায় তুলতে পারেন। শব্দসংখ্যা ৩০০। লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ bengaltimes.in@gmail.com )