নজরুল ইসলাম
মুসলমান সমাজে তিনতালাক প্রথা বাতিলের যে দাবি উঠেছে, তা মানতে নারাজ মুসলিম পারসনাল ল বোর্ড। এই নিয়ে তারা একটা সমাবেশও করে ফেলল। সমাবেশের প্রচারে শহর জুড়ে লাগানো হয়েছিল বিশাল হোর্ডিং । তাতে বলা হয়েছে, শারিয়তে মহাম্মদিতে কোনওরকম আপস গ্রহণযোগ্য নয়।
ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এখানে শরিয়তি বা অন্য কোনও ধর্মের আইন চলতে পারে না। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলি ধর্মোন্মাদদের কাছে মেরুদণ্ড বিকিয়ে দিয়েছে। হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশে খাপ পঞ্চায়েতগুলি সমান্তরাল সরকার ছালায়। মেয়েদের জিনস পরা, মোবাইলে কথা বলা, ভিন-জাতে বিয়ে, অনার কিলিং, কন্যাভ্রুন হত্যা সব বিষয়ে তারা অসভ্যতার সমর্থক। ওই রাজ্যের শাসক বা বিরোধী, কেউই তাদের চটায় না। বরং মদত দেয়।
উত্তরভারতের সেই হাওয়া পশ্চিমবঙ্গে এসেও পৌঁছেছে। প্রকাশ্য সভায় তিনতালাক প্রথাকে সমর্থন করছেন শাসক দলের নেতামন্ত্রীরা। পার্থ চ্যাটার্জি, ববি হাকিম, সুলতান আহমেদ, ইদ্রিস আলি, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। এদের মধ্যে পার্থবাবু শিক্ষামন্ত্রী হলেও মাঝে মাঝে এমন কান্ড-কারখানা ঘটান যে শিক্ষা নিয়ে সন্দেহ জাগে। তারপর তিনি হিন্দু ব্রাহ্মণ। কাজেই
ইসলাম নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা বেকার। তাই বাকি নেতাদের কিছু প্রশ্ন করি।
বলা হচ্ছে, শারিয়তে মহাম্মদিতে কোনওরকম আপস গ্রহণযোগ্য নয়।
১। আচ্ছা ববিবাবু, সুলতানবাবু, ইদ্রিসবাবু, সিদ্দিকুল্লাবাবু, ইসলামে তো মদ খাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। আপনারা কেন বলছেন না, রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করতে হবে? মদের লাইসেন্স দিয়ে আপনাদের সরকার প্রছুর টাকা আয় করে। কেন বলছেন না, মদের দোকান বন্ধ না করলে, মুসলমানরা তৃণমূলের পাশে থাকবে না?
২। ইসলামে সুদের কারবার গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ মুসলমানরা ব্যাঙ্কে টাকা রাখেন। অনেক মুসলমান ব্যাঙ্কে কাজ করেন। আপনারা কেন বলছেন না, কোনও মুসলমান ব্যাঙ্কে টাকা রাখবে না? কেউ ব্যাঙ্কে কাজ করবে না। কেন বলছেন না রাজ্যে ব্যাঙ্ক বন্ধ করতে হবে?
৩। ইসলামে নাচগান গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সারা বছর উৎসব। সারা বছর নাচগান। মুখ্যমন্ত্রী নাচিয়ে গাইয়েদের নিয়ে ঘুরে বেড়ান। আপনারা কেন বলেন না, এই সব বে-শরিয়তি কারবার চলবে না?
৪। রাজ্য সরকার ইমামদের ভাতা দেয়। আমরা জানতে চাই শরিয়তে কি শাসকের থেকে দক্ষিনা নেওয়াকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়? আপনারা কেন এর বিরোধিতা করছেন না?

৫। সর্বোপরি ইসলামে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ। ববি হাকিম, আপনি কীভাবে একটি দুর্গাপূজা কমিটির সভাপতি হয়ে গেলেন? এই কাজ কি শরিয়তে গ্রহণযোগ্য?
সবশেষে একটি মোক্ষম প্রশ্ন করতে চাই। আপনারা যে নিজেদের অফিসে মমতাদেবীর ছবি টাঙান সেটা কি শরিয়তে গ্রহণযোগ্য?
জানি এসবের উত্তর আপনারা দেবেন না। এসবের প্রতিবাদ করবেন না। কারণ মদ বন্ধ করলে বা দিদির ছবি বন্ধ করলে আপনাদের মন্ত্রিত্ব ঘুচে যাবে। ব্যাঙ্ক, নাচগান বন্ধ করতে গেলে মুসলমানরাই আপনাদের পেটাবে। কারণ মুসলমানরা জানেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যায়।
আপনারাও জানেন। কিন্তু আপনারা তো মুসলমানদের ভালো চান না। মুসলিম সম্প্রদায়ের মেধাবী ছেলে-মেয়েরা শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে এগিয়ে যাক, তা চান না। নিজেদের ভালো চান। তাই গোঁড়ামিতে সুড়সুড়ি দিয়ে, ভোট হাসিল করতে চাইছেন। একটাই অনুরোধ, রাজনীতি করছেন করুন। দয়া করে শরিয়তের উদাহরণ টানবেন না।
(মতামত ব্যাক্তিগত। লেখক একজন স্কুল শিক্ষক। ইনি আই পি এস নজরুল ইসলাম নন। কোনও ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে নয়, যুক্তির নিরিখেই এই লেখা। আপনারাও যুক্তি নির্ভর লেখা পাঠাতে পারেন। এই নিয়ে সুস্থ বিতর্ক হতেই পারে। )