নন্দ ঘোষের কড়চা
সবাই শুধু নন্দ ঘোষের দোষ খোঁজে। এবার তাঁর পালা। তিনি রোজ অন্যদের দোষ খুঁজতে শুরু করেছেন। ইস্টবেঙ্গল মাঠে শাহরুখ বলে গেলেন তিনি ইস্টবেঙ্গলের ফ্যান। তাঁকে এবং ইস্টবেঙ্গলের সেই হাততালি দেওয়া পাবলিককে একহাত নিলেন নন্দ ঘোষ।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা যে এত বোকা, তা জানতাম না। শাহরুখ খান গায়ে লাল হলুদ জার্সি জড়িয়ে বললেন, আমি ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। অমনি সবাই হাততালি দিতে লাগল। ভাবখানা এমন, যেন স্বয়ং মেসি এসে ইস্টবেঙ্গলে নাম লিখিয়েছেন। শাহরুখ যে মাথায় কতবড় টুপিটা পরিয়ে গেল, সেটাই এরা বুঝল না।
ইদানীং ইস্টবেঙ্গল মাঠটা বলিউডের সিনেমা প্রচারের জায়গা হয়েছে। এর আগে অক্ষয় কুমার আর সোনাক্ষী সিনহা লাল হলুদ জার্সি পরে নিজেদের সিনেমার প্রচার করেছিল। এবার করল শাহরুখ আর কাজল। এরা কেউ ইস্টবেঙ্গল কত সালে প্রতিষ্ঠিত তা জানে? এ বছরের ক্যাপ্টেনের নাম জানে? কোচকে চেনে ? ডু ডংয়ের ছবি দেখালে চিনতে পারবে? পঞ্চপান্ডবের একজনেরও নাম বলতে পারবে? সিনেমার প্রচারের জন্য বলছে, আমিও সমর্থক। আর তাই শুনে, না বুঝেই ব্যাটারা নাচচে।
একসময় মোহনবাগানের সমর্থক ছিলেন মান্না দে, ইস্টবেঙ্গলের এস ডি বর্মণ। রোভার্স কাপ এলেই সব কাজ থামিয়ে মাঠে চলে আসতেন এসডি বর্মন। এখনও মোহনবাগানের আছে বাবুল সুপ্রিয়, ইস্টবেঙ্গলের আছে ব্রাত্য বসু। এরা হলেন সত্যিকারের সেলিব্রিটি সমর্থক। হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও ক্লাবের সব খবর রাখেন। কিন্তু শাহরুখ? তিনি তো এর আগে বলেছিলেন, আমি মহমেডানের সমর্থক। এরপরে কখনও সিনেমার প্রচারের সুবিধা হবে বুঝলে বলবেন আমি মোহনবাগান সমর্থক।
যিনি ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক, তিনি নিশ্চয় গত বড় ম্যাচের ফলাফল জানেন। কোনও ইস্টবেঙ্গল সমর্থক শাহরুখকে ফোন করে স্কোরটা জানতে চান তো? জানতে চান তো আসিয়ান কাপ জিনিসটা খায় না মাথায় মাখে? দেখবেন শাহরুখ ক-ক-ক করতে থাকবেন।
এত হাজার হাজার ইন্টারভিউ দিয়েছেন। কোথাও, কোনওদিন বলেছেন, আমি ইস্টবেঙ্গলের ফ্যান? শাহরুখকে চ্যালেঞ্জ, তিনি একবার বলুন ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানকে হারালে আমি পার্টি দিই, একবার বলুন মোহনবাগানের বদলে ইস্টবেঙ্গল আই লিগ জিতলে আমি বেশি খুশি হতাম। বলবেন না। কারণ, বললে তাঁর মোহনবাগানী ভক্তরা চটে যাবে। তাঁর ব্যবসার ক্ষতি হবে। একবার বলুন, ইস্টবেঙ্গল মহমেডানকে পাঁচ গোলে হারালে আমি বাড়িতে বিরিয়ানি খাই। বলবেন না। কারণ, বললে রাজাবাজারে তাঁর কুশপুতুল পোড়ানো হবে।
আসলে, শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমাররা খোঁজখবর নিয়ে দেখেছেন, ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মাথায় ঘোল ঢালা খুব সোজা। তাই বিনা পরিশ্রমে হাততালি নিয়ে গেলেন। আচ্ছা, ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সকলেই তো বোকা নন। সেই সমর্থকরা দয়া করে অন্যদের বোঝান যে, শাহরুখের বোকা বোকা ডায়লগ শুনে হাততালি দিলে নিজের ক্লাবকেই অপমান করা হয়।
(লেখাটি লিখেছেন দিব্যেন্দু দে। আপনিও হয়ে উঠতে পারেন নন্দ ঘোষ। লিখে ফেলুন নিজের মনের কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ bengaltimes.in@gmail.com)