বৃষ্টি চৌধুরি
দুপুর নাগাদ হঠাৎ একটি ভাল খবর শুনলাম। রানাঘাটের নিন্দনীয় গণধর্ষণের সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুরুতেই খোলা মনে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।
আমি তৃণমূল নই। মুখ্যমন্ত্রীর গুণমুগ্ধও নই। বরং, নানা ইস্যুতে তাঁর ভূমিকার সমালোচনাই করে থাকি। কিন্তু সব ব্যাপারেই সমালোচনা করতে হবে, এই মনোভাবেও বিশ্বাসী নই। তাই এই তদন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই।
কিন্তু জানতাম, মুক্তমনে স্বাগত জানাতে অনেকেরই দ্বিধা থাকবে। টিভির সামনে বসে সেটাই দেখলাম। এরপরেও নানারকম সমালোচনা ধেয়ে আসছে। তাঁদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম না, সিবিআই দেওয়াটা ঠিক হয়েছে নাকি ভুল। গত তিন বছরে বেশ কিছু ব্যাপারে সিবিআই তদন্তের দাবি উঠলেও তাকে উপেক্ষা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বরং, সেই সিবিআইকে আটকানোর প্রাণপন চেষ্টা করেছেন। সেটা অবশ্যই সমালোচনার যোগ্য। একমাত্র স্তাবকরা ছাড়া সমালোচনা করেওছেন। কিন্তু আজকের এই সিদ্ধান্তের পর এত সমালোচনা কেন ?
টিভিতে যাঁদের কথা শুনলাম, প্রায় সবার মুখেই এক কথা, চাপে পড়ে সিবিআই করতে বাধ্য হলেন । আমাদের মুশকিলটা হল, একটা ভাল কাজকেও আমরা খারাপভাবে দেখানোর চেষ্টা করি। হ্যাঁ, এই ঘটনার জন্য ভিনরাজ্যে, এমনকি বিদেশেও রাজ্যের নিন্দা হচ্ছে। বিরোধী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবাই সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন। অনায্য দাবি নয়, দাবিটা যথার্থই ছিল। মুখ্যমন্ত্রী তো সেই দাবিই মেনে নিলেন। তাহলে এত আপত্তি কীসের ? ‘চাপের মুখে’ও যদি ভাল কাজ করে থাকেন, মন্দ কী ?
এটা ঘটনা, রাজ্য পুলিশের উপর মানুষের খুব একটা আস্থা নেই। বিশেষ করে, সারদা কান্ড ধামাচাপা দেওয়ায় যে দুই অফিসার সক্রিয় ছিলেন, সেই অর্ণব ঘোষ ও রাজীব কুমারের উপর তো থাকারই কথা নয়। তাই সিবিআই চাওয়ার মধ্যে কোনও অন্যায় ছিল না। হ্যাঁ, মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও হয়ত আছে। ১) সিবিআই অপরাধীদের ধরতে পারলে তিনি বলতে পারবেন, আমিই তো সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলাম। ২) সিবিআই অপরাধীদের ধরতে না পারলে বলতে পারবেন, তদন্তের দায়িত্ব তো সিবিআইকে দিয়েছিলাম। এরপর ওরা না পারলে আমরা কী করতে পারি ? সেই সুযোগে সারদাকান্ডে সিবিআই তদন্ত নিয়েও সোচ্চার হওয়া যাবে।
তবু বলছি, যদি মুখ্যমন্ত্রীর ‘বোধোদয়’ হয়ে থাকে, তবে তাকে স্বাগত জানানোই উচিত। আসলে, আমরা খোলাচোখে সবকিছু দেখতেই বোধ হয় ভুলে গেছি। মুখ্যমন্ত্রীর রানাঘাট যাওয়া নিয়েও কত সমালোচনা। তিনি তো গিয়ে ভালই করেছেন। এর মধ্যে অন্যায়টা কোথায় ? তবে, সেখানে গিয়ে তিনি যেভাবে বিরোধীদের আক্রমণ করেছেন, সেটা হয়ত ঠিক হয়নি। আরেকটু সংযম দেখানো উচিত ছিল। অন্তত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এমন অসংযমী হুঙ্কার কাম্য নয়। হ্যাঁ, এই আচরণের সমালোচনা করুন, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী রানাঘাট যাওয়ার জন্য সমালোচনা হবে কেন ? মুখ্যমন্ত্রীও তো মানুষ। একটা ভাল কাজ করার পরেও যদি এরকম প্রতিক্রিয়া দেখেন, তাহলে ভাল কাজ করতে গিয়ে আরও দশবার পিছিয়ে যাবেন। অহেতুক জেদকে আঁকড়ে ধরবেন (যেটা মাঝে মাঝেই করে থাকেন)। তাঁকে এই অহেতুক জেদের দিকে কি আমরাও ঠেলে দিচ্ছি না ? এই দায়টা কি আমরাও অস্বীকার করতে পারি ?
সুজন চক্রবর্তী থেকে রাহুল সিনহা, আব্দুল মান্নান থেকে অধীর চৌধুরি, সবার প্রতিক্রিয়াতেই কটাক্ষ। এমনকি বুদ্ধিজীবীদেরও এক সুর। একমাত্র ব্যতিক্রম বাবুল সুপ্রিয়। একমাত্র তাঁকে দেখেই মনে হল, মুক্তকণ্ঠে স্বাগত জানালেন। অহেতুক খোঁচা দেওয়ার চেষ্টা করলেন না। একেবারে পরিণত রাজনীতিকের মতোই আচরণ করলেন আসানসোলের সাংসদ। তাঁর কাছ থেকে আমরা যদি কিছুটা শিখতে পারতাম !