নন্দ ঘোষের কড়চা
( অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিন। সকাল থেকে কত অভিনন্দনের বন্যা। নন্দ ঘোষ ঠিক খবর পেয়ে গেছেন। তিনিও তাঁর কায়দায় শুভেচ্ছা জানালেন বিগ-বি কে। )
পৃথিবীতে কিছু ব্যক্তি থাকেন, যাঁরা মুর্তিমান বিস্ময়। তাঁরা বিখ্যাত হন, কিন্তু কেন বিখ্যাত হন, তা সহজ বুদ্ধিতে বোঝা যায় না। ভারতে এমন ব্যক্তির সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু তাঁদের মধ্যে পয়লা নম্বর হলেন অমিতাভ বচ্চন।
আমি নন্দ ঘোষ। সকলেরই কিছু না কিছু দোষ খুঁজে বের করি। পাশাপাশি এটাও স্বীকার করি, তাঁদের কিছু গুনও আছে। কিন্তু ৬৫০ ডেসিবেলের মেঘ গুড়গুড় কণ্ঠস্বর ছাড়া বচ্চনবাবুর কোনও গুন আজ অব্দি খুঁজে পেলাম না। ওই কণ্ঠস্বর নিয়ে আবৃতি করলেই পারতেন, অভিনয়ে কেন আসা বাপু ?
ভাবছেন, আমি কম বুঝি। তাই ভুলভাল বকছি। কিন্তু মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায়ের কথা ভাবুন। অমিতাভের সিনেমায় প্রথম কাজ মৃণাল সেনের ভুবন সোম-এ। না, মৃণালবাবু তাঁকে অভিনয় করার সুযোগ দেননি। শুধু ভাষ্যপাঠ করতে দিয়েছিলেন। এমনকি অমিতাভ বিখ্যাত হওয়ার পরেও আর ডাকেননি। সত্যজিৎ রায়ও তাই। সতরঞ্জ কি খিলাড়ি সিনেমায় তাঁকে ভাষ্যপাঠের ভূমিকাই দিয়েছিলেন। তার বেশি নয়।
এবার আসুন চেহারার কথায়। যদি বলেন কি লম্বা, তাহলে আমি বলব চিড়িয়াখানায় গিয়ে জিরাফ দেখে আসুন। যদি বলেন, কী হ্যান্ডসাম, তাহলে আমি বলব পুজো প্যান্ডেলে কার্তিক ঠাকুর দেখুন। দেখুন মশাই, অভিনেতার আসল কাজ হল অভিনয়। অভিনেতাকে কী কী করতে হয়? নাচতে হয়। পুকুরপাড়ে বক পাখিকে ঢিল মারুন। বক যেভাবে ওড়ে, বচ্চনের নাচের স্টাইলের সঙ্গে তার মিল আছে। অভিনেতাকে অ্যাকশন জানতে হয়। কিন্তু শুধু অ্যাকশনই যদি দেখব, তাহলে টিভিতে ডব্লু ডব্লু এফ দেখলেই হয়।
বচ্চন যখন সুপারস্টার, তখনকার সিনেমাগুলো দেখুন। কালিয়া, কুলি, ডন, শান। চোখ থেকে মোহ চশমা খুলে দেখুন তো কেমন লাগে। যেমন অখাদ্য সব সিনেমা, তেমনি অখাদ্য অভিনয়। কুলিতে নির্বাচনী প্রচারসভায় দুই প্রতিপক্ষ গুলির লড়াই করছে। ডন-এ কবরখানায় ডাইরি নিয়ে লোফালুফি করছে। যত্তসব।
ভাল সিনেমা হয়েছিল শোলে। কিন্তু ওটা বচ্চনের একার সিনেমা নয়। আর সেরা অভিনয় করেছিলেন আমজাদ খান, বচ্চন নন। অমিতাভ নাকি গব্বরের রোলটা করতে চেয়েছিলেন। পরিচালক জানতেন, তাঁকে দিয়ে ওটা হবে না। তাই আমজাদকে দিয়েছিলেন। আর ভাল সিনেমা হয়েছিল অভিমান। কিন্তু সেখানেও বিচার করে দেখুন, সেরা অভিনয় কে করেছিল, অমিতাভ না জয়া ? ছবিটা হিট হয়েছিল মূলত কিশোরের গানের জন্য। সেখানে অমিতাভের তেমন ভূমিকা নেই।
বচ্চন যে অভিনয় করতে পারেন, সেটা টের পাওয়া গেল বুড়ো হওয়ার পর। কৌন বনেগা ক্রোড়পতি করার পর। এর মাঝখানে আজ কা অর্জুন, মৃত্যুদাতা, খুদা গাওয়া, আজুবা, সূর্যবংশম, লাল বাদশা – ফ্লপস্য ফ্লপ। সত্যিকারের ভাল অভিনেতা হলে এমনটা হত ? কৌন বনেগা ক্রোড়পতি হিট করল। নকল ফ্রেঞ্চকাট আর নকল চুল (হ্যাঁ, জেনে রাখুন ওগুলো নকল) লাগিয়ে তিনিও হিট করলেন।
তার মানে, তাঁর অভিনেতা হওয়ার পেছনে আসল কৃতিত্ব কৌন বনেগা ক্রোড়পতি, নকল চুল-দাড়ি আর এখনকার পরিচালকদের।