স্বরূপ গোস্বামী
বেশ কয়েক বছর আগে একটি রাজনৈতিক জোকস শোনা যেত। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন। তিনি ভারতে এসেছিলেন। লালুপ্রসাদ যাদবকে দেখে তাঁর খুব ভাল লেগেছিল। তিনি লালুকে একমাসের জন্য আমেরিকায় নিয়ে যান। বলেছিলেন, বিহারী লালুপ্রসাদকে আমেরিকান বানিয়ে ফেরত পাঠাবেন।
একমাস পেরিয়ে গেল। লালু কোনও ফোন-টোন করেননি। রাবড়ি দেবী খুব চিন্তায়। অনেক চেষ্টা করে হোয়াইট হাউসের ফোন নম্বর জোগাড় করলেন। ফোন করলেন। স্বয়ং ক্লিন্টন ফোন ধরলেন। রাবড়ি দেবী নিজের পরিচয় দিতেই প্রেসিডেন্ট বললেন, ভাবী, ম্যায় বিলুয়া বোল রাহা হুঁ।
মোদ্দা কথাটা হল, তিনি লালুকে নিয়ে গিয়েছিলেন আমেরিকান বানাবেন বলে। আর এক মাস লালুর পাল্লায় পড়ে নিজেই বিহারী হয়ে গেছেন। মহম্মদ সেলিমকে দেখেও তেমনটাই মনে হচ্ছে। গিয়েছিলেন বীরভূমে, অনুব্রতর জেলায়। ক্লিন্টন যেমন লালুর সুরে কথা বলতে শুরু করেছিলেন, দেখা যাচ্ছে সেলিমসাহেবও তেমনি অনুব্রতর ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছেন।
এমনিতেই সেলিম বেশ সুবক্তা। হিন্দি, উর্দু, ইংরাজি, বাংলা- চারটে ভাষাতেই তুখোড় কথা বলতে পারেন। যখন যে ভাষায় বলেন, মনে হয় সেটাই তাঁর মাতৃভাষা। কোন মঞ্চে কোনটা বলতে হয়, কোথায় কতখানি সুর চড়াতে হয়, বেশ ভাল জানেন। যখন যেখানে বলেন, হাততালি নিজের দিকে টেনে নিতে জানেন। আর সেটাই বোধ হয় কাল হয়েছে। হাততালি পাওয়ার জন্য অনুব্রতর মডেল নিয়েছেন।
সূর্যকান্ত মিশ্র নানা জনসভায় বলে চলেছেন, আমরা এলে তৃণমূলের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের। তৃণমূলের কর্মীদের যেন ঘরছাড়া না হতে হয়, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। একজন যথার্থ দায়িত্বশীল নেতার মতোই কথা বলেছেন। আর সেলিমসাহেব বলে ফেললেন, ‘আমি সূর্য মিশ্র নই। আমি বদলাও চাই। প্রতিটি রক্তবিন্দুর হিসাব নিতে চাই।’ এমন মন্তব্যে প্রচুর হাততালি পড়ে। এক্ষেত্রেও তাই পড়ল।
সস্তা হাততালির মোহে উত্তেজক কথা বলাটা লোকাল বা জোনাল স্তরের নেতাদের তবু মানায়। তাই বলে একজন পলিটব্যুরো সদস্য এই সুরে কথা বলবেন ? এই সেলিমকেই তো অনেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রোজেক্ট করার কথা বলছিলেন। কয়েকদিন আগে মমতা বলেছিলেন, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব। তার সঙ্গে এই কথার খুব কি তফাত আছে ?
সেখানে সম্ভবত খুব বেশি চ্যানেল ছিল না। বড়সড় বিতর্ক হতেই পারত। বেঁচে গেলেন কিছুটা নরেন্দ্র মোদির জন্য। প্রধানমন্ত্রীর তিন-তিনটি জনসভা। সবগুলোই লাইভ দেখাতে হল। তাই নিয়ে নানা বিতর্কও চলবে সন্ধে থেকে। নইলে, সারাদিন কিন্তু সেলিমের এই মন্তব্য নিয়েই আলোচনা হত। এই ‘অমৃত-বচন’ শুনে দলের কিছু উগ্র সমর্থন উজ্জীবিত হতে পারেন। কিন্তু যাঁরা এই অশান্তির আবহ থেকে বেরিয়ে এসে একটু শান্তি চান, তাঁরা নিঃসন্দেহে ভয় পেয়ে যাবেন। যাঁরা বামেদের বিকল্প ভাবতে শুরু করেছিলেন, তাঁদের সেই ভাবনা কোথাও একটা ধাক্কা খেত।
সেলিমসাহেব, এখন কঠিন সময়। কর্মীদের উজ্জীবিত করুন। কিন্তু তা করতে গিয়ে কিছুটা সংযমও জরুরি। যা অনুব্রতকে মানায়, তা আপনাকে মানায় না, এটা বুঝতে শিখুন। একটা লড়াই যখন সবে দানা বাঁধছে, তাকে এভাবে দুর্বল করে দেবেন না। দয়া করে নিজের ঘাড়ে অনুব্রতর ভূত চাপাবেন না।