স্বপনদা,
প্রথমেই বলে রাখি আমি আপনার চিরশত্রু ক্লাবের সমর্থক। তাই সামনা সামনি আপনাকে কোনও দিন দাদা বলে জড়িয়ে ধরব না। বরং বড় ম্যাচের দিন গালাগাল দেব।
আরও বলে রাখি আমি নিজের নামে চিঠিটা লিখছি না। কারণ তাতে আপনার ক্লাবের সমর্থকরা ভাববে, “একটা মাচা আমাদের কর্তাকে ভালো বলছে” ভেবে আমার ক্লাবকে নিয়ে খিল্লি করবে। আর আমার ক্লাবের সমর্থকরা ভাববে, “এই মালটা আসলে লোটা। ” ভেবে আমার গুষ্টি উদ্ধার করবে। আমি চাই না, লোটারা আমার প্রশংসা করুক, আর মাচারা আমাকে ভুল বুঝুক।
স্বপনদা আমি মোহনবাগানি ছিলাম, আছি, থাকব। জীবনেও আপনার ক্লাবের হয়ে গলা ফাটাব না। আমি চিঠিটা শুধু আপনাকে সম্মান জানিয়ে লিখছি।
ক্লাবে ক্লাবে রেষারেষি থাকেই। আর এই রেষারেষিটাই ময়দানের প্রাণবায়ু। আমরা যদি বিপক্ষের কোচ, খেলোয়াড়, কর্তাদের নিয়ে খিল্লি না করি, তা হলে মজাটাই মাটি হবে। একে অন্যকে নিয়ে হাসাহাসি করতে যদি কারোর আপত্তি থাকে তাহলে সে মাঠে না এসে কবিতা পাঠের আসরে যাক।
স্বপনদা, ইস্টবেঙ্গলের কোচ, খেলোয়াড়, কর্তাদের মধ্যে আমরা সব থেকে হাসাহাসি আপনাকে নিয়েই করি। কখনও আপনার পদবী বিকৃত করে করি। কখনও আপনার মুখ খারাপ করার বদভ্যাস নিয়ে করি। শুধু সাধারন সমর্থকরা নয়, রেডিও এক অনুস্থানেও আপনাকে নিয়ে মজা ওড়ানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ইস্টবেঙ্গল কি স্বপন ball নিয়ে প্র্যাকটিস করে?
অন্যদের মতো আমিও আপনাকে নিয়ে করি। কিন্তু দাদা, এই হাসাহাসির মধ্যেও আমাদের অনেকের মনে আপনার প্রতি শ্রদ্ধা আছে। কারণ শত্রু হন আর যাই হন, আপনি একজন নির্ভেজাল ফুটবলপ্রেমী, ক্লাবপ্রেমী। ইস্টবেঙ্গলের খারাপ দিনেও আপনাকে দেখেছি ড্রেসিং রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। চোয়াল ঝুলে পড়েছে। কিন্তু সরে যাননি। মুখ লুকাননি।
আমরা শুনেছি, আপনি রোজ সকালে ক্লাবে আসেন, বাড়ি যান রাতে। কখনও এর অন্যথা হয় না। যেদিন আমরা আই-লিগ জিতলাম। সেদিনও আপনি ক্লাবেই ছিলেন। মোহনবাগানের অত্যুৎসাহী কিছু সমর্থক আবির মিষ্টি নিয়ে আপনাদের ক্লাবে গেছিল। আপনাদের ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে নাচানাচি করেছিল।
অন্য কেউ হলে বাইরে বেরত না। আপনি বেরিয়েছিলেন। আপনার হাতে মিষ্টি দিয়ে, আবির মাখিয়ে আমাদের আনন্দ দ্বিগুন হয়েছিল। কিন্তু আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, আপনার ভদ্রতা দেখে। জানি সবুজ মেরুন আবির আপনার শরীরে জ্বালা ধরিয়েছিল, তবুও সব জেনেও আপনি সেই আবির মেখেছিলেন। কারণ আপনি আবির না মাখলে ইস্টবেঙ্গলের দোরগোড়ায় আমাদের উল্লাস বন্ধ হত না।
আমরা জানি ইস্টবেঙ্গল আপনার কাছে প্রথম ও শেষ প্রেম। সেই প্রেমকে নিয়ে আপনি অন্য অনেকের মতো টাকাপয়সার জন্য ছিনিমিনি খেলেননি। আপনাকে নিয়ে যতই হাসাহাসি হোক, আপনি অসৎ, আপনি ক্লাবকে ভাঙ্গিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করেন এমন কথা কেউ বলে না। এবাপ্যারে আজকের ময়দানে আপনি সত্যিই ব্যতিক্রম।
আপনি সম্মান পেয়েছেন, এতে আমি, আপনার শত্রু হয়েও আনন্দ পেয়েছি। কারণ আপনি এই সম্মানের যোগ্য। যিনি মন দিয়ে নিজের ক্লাবকে ভালোবাসেন, ভালো মন্দ সব পরিস্থিতিতে ক্লাবের পাশে থাকেন, তিনি যে ক্লাবেরই হন না, সম্মানের পাত্র।
শুধু স্বপনদা একটা অনুরোধ, মুখ খারাপ করার অভ্যাসটা একটু কমান। ওসব কাজ, ছেলে ছোকরাদের মানায়। আপনার মতো লোককে কি মানায়?
ইতি,
জনৈক মোহনবাগান সমর্থক