স্বরূপ গোস্বামী
কয়েকদিন আগেই আপনি রেগে গিয়েছিলেন। যত না বিরোধীদের উপর, তার থেকেও বেশি নিজের দলের উপর। দলের কাছে হয়ত অস্বস্তি, কিন্তু সেই ক্ষোভপ্রকাশটা সত্যিই খুব জরুরি ছিল।
এরপরেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হল না। যেমন বিরোধী, তেমন শাসক। দুপক্ষই রীতিমতো নাবালকের মতো সংসদ ভণ্ডুল করে চলেছে। সংসদকে মাছের বাজারের থেকেও নিম্নস্তরে নামিয়ে এনেছে। মাছের বাজারে চিৎকার হয়, কিন্তু বেচা–কেনাটাও হয়। এখানে শুধু চিৎকারই হচ্ছে, কাজের কাজ কিচ্ছু হচ্ছে না। একদন ভণ্ডুল করেই বীরত্ব দেখাচ্ছে। আরেক দল পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টাই করছে না।
এই অবস্থায় আপনি আবার ফুঁসে উঠলেন। চাইলেন সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে। একেবারেই সঠিক পদক্ষেপ। আর কালবিলম্ব না করে পদত্যাগ করুন লোকসভা থেকে। তারপরেও কি এঁদের লজ্জা হবে ? সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে এই অসভ্যতার বিরুদ্ধে একটা জোরালো প্রতিবাদ রেখে যাওয়াটা খুব জরুরি।
নিজের সংসদীয় জীবনে বরাবরা শিষ্টাচার মেনে চলেছেন। আপনি এবং বাজপেয়িজী সংসদকে অন্য এক উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাজপেয়িজি নিজের বক্তৃতায় তুমুল বিরোধীতা করেছেন, শানিত যুক্তিতে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছেন, কিন্তু কখনও সংসদের ওয়েলে নেমে আসেননি। কখনো হট্টগোল করতে দেখা যায়নি। এমনকি হট্টগোলকে উৎসাহিতও করেননি। আপনার সংসদীয় জীবনও বেশ পরিচ্ছন্ন। হাওলায়ে যেই নাম জড়াল, সঙ্গে সঙ্গে লোকসভা থেকে পদত্যাগ করলেন। জানিয়ে দিলেন, যতদিন না আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবেন, ততদিন পর্যন্ত এই সংসদে ফিরবেন না। কথা রেখেছিলেন। আদালন থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার পর তবেই ফিরেছিলেন। এই মূল্যবোধের কথা এই প্রজন্ম জানে? আপনার দলের সাংসদরা জানে ? জানলে এভাবে হল্লা করতে পারত না। একটা আস্ত অধিবেশন। একদিনো আলোচনা হল না। ভাবা যায় ? ওই সভায় নির্বাক হয়ে আপনাকে বসে থাকতে হয়েছে। আপনার মতো সাংসদ এই হল্লাবাজির সংসদের সত্যিই বড় বেমানান। এই যন্ত্রণা কতটা আন্তরিক, আমরা বুঝি। হ্যাঁ, এই যন্ত্রনা নিয়ে আপনি সরে দাঁড়ান। অন্তত চোখের সামনে এভাবে সংসদকে ধর্ষণ হতে দেখতে হবে না।
লৌহপুরুষ, সত্যিই একটা ঝাঁকুনি দরকার। আপনার পদত্যাগটাই হতে পারে সেই মোক্ষম ঝাঁকুনি।