ফেলে আসা বছরটা কেমন গেল প্রসেনজিতের। কতটা সফল, কতটা ব্যর্থ, কোনটা কাজটা না করলেও পারতেন ? সারা বছরের নিরিখে সেইদিকে আলো ফেললেন বৃষ্টি চৌধুরি।
বছরের শুরুটা হয়েছিল ভালভাবেই। মাঝপর্বটাও মন্দ ছিল না। কিন্তু তারপরই কী যে হল! সেই চেনা প্রসেনজিৎকে পাওয়া গেল না। বোঝা গেল, সিদ্ধান্ত নিতে তাঁরো ভুল হয়। আর সেই ভুলের মাশুলও দিতে হয়। ফেলে আসা এই বছরটা প্রসেনজিৎ মনে রাখবেন নাকি ভুলে যেতে চাইবেন ? আমার মনে হয়, ভুলে যাওয়াটাই ভাল। কারণ, প্রথমার্ধে যদি সাফল্য এসে থাকে, দ্বিতীয়ার্ধে তিনি সত্যিই হতাশ করেছেন।
শুরুটা হল শঙ্খচিল দিয়ে। গৌতম ঘোষের ছবি। কাজ শুরু হয়েছিল গত বছরেই। কিন্তু মুক্তি পেল এই বছর। সুতরাং, ওটাকে এই বছরের ছবিই ধরা যেতে পারে। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। বাণিজ্যিকভাবে দারুণ সফল না হলেও ছবিটা মন্দ হয়নি। দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় বেশ ভাল মানের ছবি। প্রসেনজিৎও নিজেকে সুন্দরভাবেই মেলে ধরেছেন।
এ বছরের সবথেকে বড় সাফল্য নিঃসন্দেহে ‘প্রাক্তন’। ১৫ বছর পর একসঙ্গে প্রসেনজিৎ–ঋতুপর্ণা। একটা বাড়তি চমক তো থাকবেই। অনেক পরিচালকই এই চেষ্টা করেছেন। ধন্যবাদ নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে। তাঁরা আবার হারিয়ে যাওয়া জুটিকে ফিরিয়ে এনেছেন। এবং বেশ ভাল মানের, সুস্থ রুচির ছবিতেই তাঁদের পুনর্মিলন হয়েছে। বড় বাজেটের ছবি। চলেওছে দারুণ। বিষয় ও ভাবনা চমৎকার। দুজনেই নিজেদের অন্যতম সেরা অভিনয় উজাড় করে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে কমপ্লিট একটা প্যাকেজ। মনে রাখার মতোই কাজ।
এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু তারপরই ভুলভাল ব্যাপার স্যাপার ঘটতে লাগল। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ক্ষত। এই ছবিটা প্রসেনজিতের জীবনেও ক্ষত হয়েই থাকবে। কেন যে করতে গেলেন ! প্রসেনজিৎ নিজেও নিশ্চয় আক্ষেপ করছেন। সৃজিতের জুলফিকরও তাই। একগুচ্ছ তারকা নিয়ে ঘেঁটে ঘ করে দিয়েছেন। যত দিন যাচ্ছে, সৃজিত যেন ক্রমশ নিজেকে দুর্বোধ্য করে তুলছেন। পুরস্কারের লোভে এমন এমন ছবি বানাচ্ছেন, যা মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। যতজন জুলফিকর দেখেছেন, অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি। কারও ভাল লাগেনি। প্রায় সবার একই আক্ষেপ, জেনেশুনে প্রসেনজিৎ কেন এমন ছবি করতে গেলেন ?
এবার আসি সিরিয়ালে। বড়সড় চমক দিয়ে শুরু করতে চেয়েছিলেন মহানায়ক। এটিও সুপার ফ্লপ। বাঙালির মনে সেভাবে দাগ কাটতেই পারেনি। উত্তম কুমারের জীবন নিয়ে সিরিয়াল, সেখানে অভিনয় করছেন প্রসেনজিৎ। একটা বড়সড় ব্যাপার ঘটতে পারত। কিন্তু বিষয়টা একেবারেই দাঁড়ায়নি। মিনিমাম রিসার্চটুকুও করা হয়নি। ভুলভাল তথ্য, এমনকি সেই সময়ের অভিনেতা–অভিনেত্রীরাও চরম বিরক্ত এই সিরিয়াল নিয়ে। টিআরপি এতটাই নেমে গিয়েছিল যে সন্ধের স্লটকে রাত এগারোটায় সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। সিরিয়ালের এত দর্শক, তবু এই সিরিয়াল নিয়মিত দেখছেন, এমন লোক খুব একটা খুঁজে পাইনি। সবাই প্রথমদিকে কয়েকটা এপিসোড দেখেছেন। পরে বিরক্ত হয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। বিরসা দাশগুপ্ত নতুন পরিচালক। সস্তা চমক তৈরি করা তাঁকে তবু মানায়। কিন্তু তা কি প্রসেনজিৎকে মানায় ? কী দরকার ছিল এমন একটা প্রোজেক্টে নাম লেখানোর ?
সবমিলিয়ে সারা বছর এই হলেন প্রসেনজিৎ। যাঁর শুরুর দিকটা বেশ চমৎকার। কিন্তু শেষের দিকটা তেমন উজ্জ্বল নয়। কঠিন পরিস্থিতি থেকে বারবার তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। আশা করব, এই ছোট ছোট ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছর নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হবেন।
(ফেলে আসা বছর কার কেমন গেল ? এই নিয়ে খোলামেলা আলোচনা। আপনিও অংশ নিতে পারেন। কোনও একজনকে ধরে আপনিও লিখতে পারেন। তিনি রাজনীতি, সাহিত্য, বিনোদন, খেলা বা যে কোনও জগতের মানুষ হতে পারেন। আপনার মূল্যায়ন, আপনার বিশ্লেষণও স্বাগত। লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ bengaltimes.in@gmail.com )