রবি কর
তৃণমূল কংগ্রেসে মহাভারতের ছড়াছড়ি। ভাটপাড়ায় অর্জুন সিং, নিউটাউনে সব্যসাচী চক্রবর্তী, বেহালায় পার্থ চ্যাটার্জি। এছাড়াও আছেন কেষ্ট মানে বীরভূমের অনুব্রত। এঁরা সকলেই স্বনামধন্য লোক। নিন্দুকে বলে, একজন তোলাবাজ, একজন সিন্ডিকেটবাজ, একজন গুড়-বাতাসাবাজ। আর একজন শিক্ষাবাজ, থুড়ি শিক্ষামন্ত্রী।
পার্থ মানে অর্জুন। মিডিয়ার দৌলতে অর্জুন, সব্যসাচী, কেষ্টারা যতই বিখ্যাত হোক, পার্থ নামটি পার্থবাবুকেই সবথেকে বেশি মানায়। তিনি দলের মহাসচিব, সরকারের শিক্ষামন্ত্রী। তার চেহারার সঙ্গে অর্জুনের থেকে ভীমের মিল বেশি, কিন্তু আমরা সেটাকে গুরুত্ব দিইনি। ভেবেছিলাম চেহারা মোটা হলেই মাথা মোটা হবে এমন কোনও কথা নেই।
কিন্তু কালে কালে… ওমা এতো অর্জুনও নয়, ভীমও নয় একেবারে কেষ্টা, মানে অনুব্রত। তৃণমূল দলটি এমনই সাম্যবাদী যে মাধ্যমিক পাস অনুব্রতর সঙ্গে পি এইচ ডি করা পার্থর কোনও তফাৎ বোঝা যায় না। কি চেহারায়! কি আচার আচরণে!
কথায় বলে, ছাত্রকে দেখে বোঝা যায় গুরু কেমন। দ্রোণাচার্যের ছাত্র ছিলেন অর্জুন। আবার অর্জুনের ছাত্র ছিলেন মহাবীর সাত্যকি। আমাদের পার্থবাবু ছাত্র হিসাবে বেছে নিয়েছেন আরাবুলকে। আরাবুল পার্থবাবুকে গুরু বলেন। অবশ্য রকমসকম দেখে মনে হয় আরাবুলই পার্থবাবুর গুরু। পার্থবাবু সিদ্ধার্থনাথ সিংকে বলেন সিদ্ধিনাথ, এর আগে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বলেছিলেন হত্যাবাবু। হয়তো ভাবেন খুব হাসির কথা বলছেন। আসলে এইসব কথার মধ্যে ভীষণভাবে আরাবুলের প্রভাব আছে।
কোনও বিতর্ক উঠলেই তিনি বলেন আইন আইনের পথে চলবে। আইন কি একটা হাত-পাওয়ালা জীব যে নিজে নিজে চলবে? আইনকে আইনের পথে চালাতে হয়। এবং সেই চালানোর দায়িত্ব মন্ত্রীদের, মানে পার্থবাবুদের। কিন্তু নারদ বিতর্কের পর তিনি বললেন, “যে ভিডিও বিশ্বাস করি না তার তদন্ত হবে না। “ লে হালুয়া! এর পর কোনও ধর্ষক যদি বলে “আমি বিশ্বাস করি না কোনও ভুল করেছি”, তাহলে তার বিচার হবে না? যদি কোনও ছাত্র ফেল করে বলে আমি বিশ্বাস করি না আমি ফেল করেছি, তখন?
শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু বলছেন, “আমি অধ্যাপকদের মাইনে দিই তাই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তক্ষেপ করব।’’ আমি মাইনে দিই মানে? মাইনের টাকা কি পাণ্ডুরাজা দেয় না দেবরাজ ইন্দ্র দেয় ? বিবেকানন্দ কলেজে উপাচার্য মার খেল। শিক্ষামন্ত্রী বললেন, এর সঙ্গে তৃণমূল জড়িত নয়। ডাহা মিথ্যে। তারপর ধরা পড়ল পি এইচ ডি করতে গিয়ে টুকলি করেছেন। কই মহাভারতের অর্জুন তো এমন মিথ্যা বলতেন না!
মিথ্যা কথার আরও প্রমাণ পাওয়া গেল নির্বাচনী প্রচারে। কোনও সম্মতি না নিয়েই লিফলেটে লিখে দিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি তাঁকে সমর্থন করেছেন। পার্থবাবু বোধহয় স্বামী বিবেকানন্দর একটা কথা ভুলে গেছেন, “চালাকির দ্বারা মহৎ কার্য হয় না।”
এই ভুলে যাওয়াটা খুব বিস্ময়কর। কারণ পার্থবাবু নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র। রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন, “নরেন শিক্ষে দেবে।’’ আমরা দেখতে পাচ্ছি, রামকৃষ্ণের নরেন, মানে বিবেকানন্দ পার্থবাবুকে কোনও শিক্ষে দিতে পারেনি। অথবা হয়তো দিয়েছিলেন, কিন্তু রামকৃষ্ণ মিশন ছেড়ে তৃণমূল মিশনে ভর্তি হয়ে তিনি সেই শিক্ষা ভুলে গেছেন। এখন তিনি আরাবুল- অনুব্রতর শিক্ষায় শিক্ষিত। রামকেষ্টর থেকে অনুকেষ্ট তাঁর কাছে এখন বেশি প্রিয়।