সরল বিশ্বাস
এবছরের শুরুর কথা। বর্ধমানে ছিল শততম প্রশাসনিক বৈঠক। সেখানে হাজির ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাপরাজিত মুখোপাধ্যায়। সবাই সরকারের প্রশস্তি গাইছেন। তিনিই বা পিছিয়ে থাকেন কেন ?
তিনি বলে বসলেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দারুণ। সেই কারণে এখন মানবাধিকার কমিশনের কাছে আর কোনও অভিযোগ আসে না।
হায় রে! যাঁরা মানবাধিকার কমিশনের কাছে আসেন, তাঁদের বোধ-বুদ্ধি, বিচক্ষণতা সাধারণত একটু বেশিই হয়। তাঁরা দিব্যি জেনে গেছেন, মানবাধিকার কমিশনে গিয়ে কোনও ফল হবে না। এটি সরকারের রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত হয়েছে। সরকারকে সামান্যতম চটানোর মতো ক্ষমতাও এখন এই কমিশনের নেই।
অর্থাৎ, মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জমা পড়ছে না, এটা আইনশৃঙ্খলার বিজ্ঞাপন নয়। এটা আসলে মানবাধিকার কমিশনের প্রতি অনাস্থার একটা ছোট্ট নমুনা।
ঠিক তেমনি সিবিআই। কোনদিন সিবিআই কর্তারা হয়ত দাবি করবেন, রাজ্য সরকার দারুণ স্বচ্ছ, সেই কারণে এখন আর সিবিআই তদন্তের দাবি ওঠে না।
এটা ঘটনা, গত কয়েক মাসে এত বড় বড় কান্ড ঘটলেও আর সিবিআই তদন্তের দাবি সেভাবে ওঠেনি। কারণ, সিবিআই তদন্তের উপর সেই আস্থা অনেকটাই চলে গেছে।
সিবিআই চাইলে তদন্ত করতে পারে না, এমন নয়। যেটা আমি, আপনি সাদা চোখে বুঝতে পারছি, সেটা সিবিআই বুঝতে পারছে না ? বেশ ভাল বুঝতে পারছে। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে শুরুর দিকে তারা তো ভালই তদন্ত করছিল। অনেক অজানা বিষয় সামনে এসেছিল। অনেককেই ডাকা হল, জেরা হল, কে কী করেছেন, অনেকটা পরিষ্কার হল।
কিন্তু তারপর থেকেই যেন শীতঘুমে গিয়েছে সিবিআই। তদন্তে অগ্রগতি আর চোখে পড়ছে না। বেশ বোঝা যাচ্ছে, কোথাও একটা দড়ি টেনে দেওয়া হয়েছে। আর এগোনো যাবে না। কেলেঙ্কারি খুঁজে বের করা নয়। এখন ধামাচাপা দেওয়াই যেন তাদের একমাত্র কাজ।
দিনের পর দিন মদন মিত্রর জামিন আটকানোর চেষ্টা হল। বলা হল, তিনি নাকি প্রভাবশালী। আরে ভাই, তদন্তের অগ্রগতি কই ? তাঁকে সেভাবে জেরা করা হল কই ? কুণাল ঘোষ। তিন বছর বন্দী রইলেন। সারদার অনেক অজানা বিষয় তিনি জানেন। নিজে থেকে সেসব জানাতে চেয়েছিলেন। সিবিআই তাঁর কথা শুনলই না। কুণাল হয়ত কিছুটা বাড়িয়ে বলতেন। হয়ত দু-একটা মিথ্যেও বলতেন। সেটা বোঝার মতো বিচক্ষণতা নিশ্চয় সিবিআইয়ের ছিল। তাঁর কথা শুনতে বাধা কোথায় ছিল ?
কিন্তু কুণালের কোনও অভিযোগ শোনাই হল না। বোঝাই যাচ্ছে, কুণাল অনেকের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেন। অকাট্য প্রমাণ তুলে ধরতেন। তাতে সিবিআই আরও অস্বস্তিতে পড়ত। তখন হয়ত ধামাচাপা দেওয়া কঠিন হয়ে যেত।
কেন জেরা করা হল না কুণাল ঘোষকে ? এর কোনও উত্তর নেই। কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যাবে। শুধুমাত্র এই একটা বিষয় থেকেই বোঝা যায়, সিবিআই তদন্তের ব্যাপারে মোটেই আন্তরিক নয়।
সিবিআই কর্তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। কিন্তু সততা নিয়ে তুলছি। সিবিআই তার বিশ্বাসযোগ্যতা অনেকটাই হারিয়েছে। যারা সিবিআই-কে এমন জায়গায় এনে দাঁড় করালেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা হবে ? হবে না। কারণ, নির্দেশটা এসেছে একেবারে উপর থেকে।
যাঁরা কথায় কথায় সিবিআই চাইতেন, তাঁরা অন্তত বুঝুন, সিবিআইয়ের সেই বিশ্বাসযোগ্যতা আর নেই। তাই দয়া করে আর সিবিআই তদন্ত চাইবেন না।