সুরঞ্জন চৌধুরি
কুড়ি পঁচিশ বছর আগে বাংলা টি ভি সিরিয়াল সপ্তাহে প্রতিদিন হত না। কোনও সিরিয়াল হত সোমবারে সোমবারে। কোনও সিরিয়াল হত বুধবারে বুধবারে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরে সিরিয়ালগুলি শেষও হয়ে যেত। ফলে তখনকার সিরিয়ালগুলি কখনও গেঁজিয়ে উঠত না। তখন সিরিয়ালের মানও ছিল অনেক ভালো। ১৩ পার্বণ, সেই সময় প্রভৃতি সিরিয়ালের কথা এখনও দর্শকদের মনে আছে। হিন্দিতেও তখন তমস, নুক্কড় প্রভৃতি ভালো সিরিয়াল হয়েছে।
কিন্তু ইদানিং কি বাংলা, কি হিন্দি সিরিয়াল একটি চরম অসহ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সব সিরিয়ালেরই এক গল্প। দুটো বর বা দুটো বউ, মাথায় চোট লেগে স্মৃতিভ্রংশ, বউয়ের মা জামাইয়ের বাড়িতে দিনের পর দিন থেকেই যায় এবং ঝামেলা পাকায়, পরিবারে বেশ কিছু আশ্রিত থাকে, কেন থাকে কেউ জানে না। সব পরিবারই যৌথ পরিবার এবং সেখানে সবাই সবার শত্রু। শাশুড়ি বউয়ের শত্রু, জা ননদ সবাই শত্রু।
সুবর্ণলতার মতো সাহিত্য সিরিয়ালের কল্যাণে শাশুড়ি বউয়ের ঝগড়ার গল্পে পরিণত হয়েছিল। এমনকি পৌরাণিক সিরিয়ালেও দেবদেবীরা একে অপরের বিরুদ্ধে ছক্রান্ত করছে।
এই পরিস্থিতিতে অন্য স্বাদ নিয়ে এসেছে জি বাংলার গোয়েন্দা গিন্নি। এখানেও পরিবারে আশ্রিত বেশ কিছু পরগাছা আছে, তারা পরিবারের মধ্যে অশান্তি পাকায়। কিন্তু আশার কথা হল, সেটা গল্পের মূল বিষয় নয়। গল্পের নায়িকা গৃহবধূ হয়েও গোয়েন্দাগিরি করে। আরও আশার কথা হল, গল্পগুলি এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। নতুন সপ্তাহে শুরু হয় নতুন রহস্যভেদের গল্প।
বাংলা ভাষায় ফেলুদা, ব্যোমকেশের মত গোয়েন্দা গল্প লেখা হয়েছে। ফলে গোয়েন্দা গিন্নির গল্পগুলি অতটা ভালো লাগে না। দু একটা গল্পে কিছুটা আজগুবি ব্যাপার এসেছে। কিন্তু টান টান রহস্যটা থেকেই যায়। কূটকচালি বাদ দিয়েও যে সিরিয়াল বানানো যায় গোয়েন্দা গিন্নি তার প্রমাণ। কেন্দ্রীয় চরিত্রে ইন্দ্রানি হালদার ভালো অভিনয় করছেন। যেমন করতেন ৩০ বছর আগে ১৩ পার্বণ সিরিয়ালে।
গোয়েন্দা গিন্নির মতো সিরিয়াল আরও তৈরি হোক।