নির্মল দত্ত
অপসংস্কৃতির অনন্য নজির গড়ল মোহনবাগান। আই লিগের দ্বিতীয় ডার্বির সংগঠক তারা। তাদের ক্লাব থেকেই টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সেই টিকিট কাটতেই আজ ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা গিয়েছিল মোহনবাগান ক্লাবে। সৌজন্যের পরাকাষ্ঠা দেখাল মোহনবাগান। সবুজ মেরুন সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হল ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। তাদের লাল হলুদ জার্সি ছিঁড়ে দেওয়া হল। বেধড়ক পেটানো হল ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার ব্যাপারে যারা আগ্রহী, তাঁরা বলতেই পারেন, এটা প্রাক বড় ম্যাচ উত্তেজনা, এমনটা হয়েই থাকে। তা, বড় ম্যাচের উত্তেজনা তো মাঠে হয় (যদিও সেটাও মোটেই কাঙ্খিত নয়। কারণ, তার পরিণতি আমরা জানি)। অতিথি ক্লাবের সমর্থকদের ওপর টিকিট কাটা নিয়ে এমন অসভ্যতা কেমন হবে?
আই লিগের প্রথম ডার্বির সংগঠক ছিল ইস্টবেঙ্গল। বহু মোহনবাগান সমর্থক ইস্টবেঙ্গল তাঁবু থেকে টিকিট নিয়েছেন। তাঁদের কিন্তু পেটানি খেতে হয়নি লাল হলুদ তাঁবুতে এসে। কোনও কটূক্তির শিকারও হতে হয়নি। কারণ, ইস্টবেঙ্গল ঘরে আসা অতিথিদের অসম্মান করে না। একসঙ্গে, এক ট্রেনে দুই দলের সমর্থকরা শিলিগুড়িতে ডার্বি দেখে এল। ফুটবলে লড়াই থাকবে, কিন্তু এমন সম্প্রীতির ছবিটাই তো দেখতে চাই। যেখানে ম্যাচ, সেই শিলিগুড়ি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ডেরা। প্রথম ডার্বিতে মাঠে নব্বই শতাংশ লাল হলুদ সমর্থকরা ইচ্ছে করলে হেনস্থা করতে পারতেন মোহনবাগান সমর্থকদের। করেননি। মোহন সমর্থকরা ভাবলেন না কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ডার্বিতে যত মোহনবাগান সমর্থকই থাকুক না কেন, স্থানীয় সবাই কিন্তু ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। সরকারিভাবে আয়োজক মোহনবাগান হলেও গ্যালারি ভরাবে সেই লাল হলুদ সমর্থকরাই। এই ধরনের ম্যাচের আগে মশাল নিয়ে না খেলাই ভাল।
এটা কি জাতীয় ক্লাবের নমুনা? আচ্ছা, মোহনবাগান কি আদৌ জাতীয় ক্লাব? কে দিল এই স্বীকৃতি? কোন সরকারের কোন বিভাগ দিল? শংসাপত্র দেখাতে পারবেন কি মোহন কর্তারা? জাতীয়তাবাদের ধ্বজাধারীরা ব্রিটিশদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে একটা ভারতীয় ক্লাবের প্রথম ডিভিশনে ওঠা আটকে দিতে চেয়েছিল। এটা এই প্রতিবেদকের বক্তব্য নয়, ইতিহাস বলছে। এরা ব্রিটিশ বিরোধী! আনরেজিস্টার্ড কোহিনুর শিল্ড খেলা, আই লিগে পেছনের দরজা দিয়ে ঢোকা থেকে শুরু করে বহু কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে মোহনবাগান। তবুও তারা যদি সত্যিই জাতীয় ক্লাব হয়, তাহলে তথ্যপ্রমাণ হাজির করুন মোহন কর্তারা। আপামোর বাঙালি (বাঙাল সমেত) শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দেবে মোহনবাগানকে। আর যদি তা না হয়, তাহলে স্বীকার করুন এটা জাতীয় ক্লাব নয়। মানুষের সঙ্গে লাগাতার মিথ্যাচার করাটাও অপরাধ। এবং সেটাও শাস্তিযোগ্য।