প্রতিবাদে গর্জে ওঠার মতো সংগঠন না হয় নেই। কিন্তু একটা বিবৃতিও দেওয়া যায় না? ত্বহা সিদ্দিকি বা ইমাম বরকতিদের তোয়াজ করা কি খুব জরুরি? সত্যিকারের মুসলিমদের পাশে দাঁড়ান। যাঁরা হিংসার কথা বলেন, তাঁদের পাশে নয়। স্পষ্ট ভাষায় নিন্দাটা জরুরি। নইলে পায়ের তলার মাটি এভাবেই সরে যাবে। লিখেছেন অমিত ভট্টাচার্য।।
গত দুদিন ধরে সোশাল মিডিয়ায় একজন খুব বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন। টিপু সুলতাম মসজিদের ইমাম বরকতি। নানা আঙ্গিকে তাঁর সমালোচনা চলছে। কেউ শালীনতা মেনে। আবার কেউ হয়ত শালীনতার ধার ধারছেন না। একেবারে বাক্যালঙ্কার অব্যয় সহযোগে।
এই আবহে একেবারেই যেন নীরব বাম নেতৃত্ব। চুপ করে থেকে কোন বার্তা দিতে চাইছেন, তাঁরাই জানেন। কিন্তু এই নীরবতা অন্য এক বার্তা বয়ে আনছে সাধারণ মানুষের কাছে। বিশেষত বাম মনষ্ক লোকেরা আরও অস্বস্তিতে পড়েছেন।
বরকতির এইসব বিবৃতি বেশ উস্কানিমূলক, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যে কোনও সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষই তাঁর এইজাতীয় মন্তব্যের বিরোধিতা করবেন, সেটাই কাম্য। কিন্তু সিপিএম নেতৃত্ব একেবারে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। সূর্যকান্ত মিশ্র এমনিতে এত টুইট করেন। অথচ, এই বিষয়ে টুইট চোখে পড়েনি। কী জানি, হয়ত বাজারি মিডিয়ায় ছাপা হয়নি। এই ভেবে গণশক্তিতেও খুঁজলাম। না, সেখানেও কিছু খুঁজে পেলাম না।
বামেদের বিরুদ্ধে সোশাল মিডিয়ায় হামেশাই এই অভিযোগ ওঠে, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে তাঁরা সংখ্যালঘু তোষণ করেন। অভিযোগটা একেবারে মিথ্যে, এমনও নয়। যেভাবে বিজেপি–র দিকে চোরাস্রোত বাড়ছে, এটা তার বড় একটা কারণ। এটা কি বাম নেতৃত্ব বুঝেও বুঝছেন না? ইমাম বরকতির মতো লোককে তোল্লাই দেওয়া কি খুব জরুরি? সংখ্যালঘু তোষণে আপনারা মমতার ধারেকাছেও যেতে পারবেন না। তাহলে কেন এই প্রতিযোগিতা? যেটা নিন্দার, সেটাকে নিন্দা করতে এত কুণ্ঠা কীসের? ত্বহা সিদ্দিকি বা ইমাম বরকতিদের তোয়াজ করে যদি মুসলিম ভোট পেতে হয়, তবে সেটা কি খুব গৌরবের? এই তোয়াজ করতে গিয়ে রোজ কত মানুষকে হারাচ্ছেন, সে হিসেবে রাখেন? বিজেপির তেমন কোনও সংগঠন নেই, সামনে তেমন কোনও নেতা নেই, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিও নেই। তা সত্বেও তারা কেন বাড়ছে, এই আত্মসমীক্ষা করেছেন? যেখানে চুপ থাকা দরকার, সেখানে আগ বাড়িয়ে বিবৃতি দিতে যান। আর যেখানে স্পষ্ট অবস্থান জানানো দরকার, সেখানে নীরব থাকেন। ত্বহা সিদ্দিকি বা ইমাম বরকতিরাই একমাত্র মুসলিম নন। তার বাইরে লক্ষ লক্ষ প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ রয়েছেন। মমতার কাছে এই মৌলবিরাই মুসলিম মুখ। কিন্তু আপনাদের কাছেও কি এঁরাই মুসলিম মুখ? এইসব ফতোয়ার বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে না পারুন, অন্তত বিবৃতিটুকু দিন। এই সাহসটুকুও যদি না দেখাতে পারেন, তাহলে চোখের সামনে বিজেপি–র বৃদ্ধি দেখার জন্য তৈরি থাকুন।