নিজেদের চূড়ান্ত ক্ষতি কীভাবে করতে হয়, তা কারাটবাবুদের কাছ থেকেই শেখা উচিত। সংসদে সংখ্যার দিক দিয়ে এমনিতেই গুরুত্ব কমে গিয়েছে। সীতারাম ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় না পাঠিয়ে যেটুকু প্রাসঙ্গিকতা আছে, সেটুকুও হারাতে চাইছেন। একের পর এক সিদ্ধান্ত দলকে ক্রমশ প্রান্তিক করে তুলছে। লিখেছেন স্বরূপ গোস্বামী।।
বেশ কয়েকমাস ধরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনও স্থির কোনও সিদ্ধান্ত হল না। সীতারাম ইয়েচুরি ফের রাজ্যসভায় যাবেন কিনা, তা নিয়ে এখনও স্পষ্ট কোনও মত উঠে এল না। পলিটব্যুরো আগেই খারিজ করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ফের আলোচনার সুযোগ ছিল। সেখানেও নাকি ক্লোজড চ্যাপ্টার। পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, এই রাজ্য থেকে এবার বামেদের কেউ রাজ্যসভায় যাচ্ছেন না। শুধু এবার নয়, আগামী দুবারেও আর কেউ যাবেন, এমন সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
সীতারাম ইয়েচুরিকে পাঠাতে সমস্যাটা কোথায় ছিল? কংগ্রেসের দিক থেকে তো আপত্তি ছিল না। বরং এই ব্যাপারে সিপিএমের যত না আগ্রহ, তার থেকে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে কংগ্রেস। তারাও চেয়েছে, রাজ্যসভায় সীতারাম ইয়েচুরির মতো একজন সাংসদ থাকুন, এতে বিরোধীতা আরও জোরদার হবে। দুঃখের কথা, যে সহজ ব্যাপারটা কংগ্রেস নেতারা বুঝলেন, সেটা বামেরা বুঝলেন না। তাঁরা অদ্ভুত এক গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছেন।
একবার বলা হল, দুবারের বেশি মনোনয়নের নিয়ম নেই। একবার বলা হল, কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক রাজ্যসভায় যাবেন, এটা দলের নীতির সঙ্গে মানানসই নয়। আবার শোনা যাচ্ছে, পরেরবার কেরল থেকে নাকি রাজ্যসভায় পাঠানো হতে পারে ইয়েচুরিকে। দুবারের বেশি যদি মনোনয়নের নিয়ম নেই, তাহলে কেরল থেকে জিতিয়ে আনার কথাই বা আসছে কেন? আর কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে যেতে এত দ্বিধার কী আছে? বাংলায় যাঁরা বিধায়ক, তাঁদের জেতার পেছনে তো সামান্য হলেও কংগ্রেসের ভূমিকা আছে। জোট করেই তাঁরা জিতেছেন। কংগ্রেসের সমর্থন নিতে এত আপত্তি থাকলে তো বিধায়কদেরও পদত্যাগ করতে হয়। তাছাড়া, জোটসঙ্গী হিসেবে কংগ্রেস যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। বিশেষ করে, কাজ্য কং নেতৃত্ব যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা দেখিয়েছেন। তাঁরা বারবার চেয়ে এসেছেন, সীতারাম ইয়েচুরিকে যেন প্রার্থী করা হয়। রাজ্যের বাম নেতৃত্বও তেমনটাই চেয়েছিলেন। কিন্তু পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজেদের যুক্তি সেভাবে তুলে ধরা গেল না।
একটা সহজ অঙ্ক কিছুতেই কারাটবাবুরা বুঝতে চাইছেন না। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে এখন কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের যতই মধুর সম্পর্ক থাকুক, আগামীদিনে তৃণমূলের সঙ্গে এই সম্পর্ক আরও মধুর হবে। যেভাবে ইউপিএ ওয়ান থেকে সমর্থন তুলে নিয়ে কংগ্রেস–তৃণমূলকে কাছাকাছি এনে দিয়েছিলেন, এবারও তেমনটাই হতে চলেছে। এবার যদি কং সমর্থন না নেওয়া হয়, আগামী দুবার তা পাওয়ার আর কোনও সম্ভাবনাই থাকবে না। যত দিন যাবে, সোনিয়া গান্ধীর কাছে মমতা ব্যানার্জির গুরুত্ব ততই বাড়বে। এমনকী অন্যান্য আঞ্চলিক দলের কাছেও বামেদের থেকে তৃণমূলের গুরুত্ব অনেক বেশই হবে। বামেরা ক্রমশ প্রান্তিক হয়ে উঠবেন। কেরল থেকে সিপিএমের দু একজন আসবেন। কিন্তু সংসদে সীতারাম ইয়েচুরির যে গুরুত্ব, তাঁরা আদৌ সেই গুরুত্ব পাবেন? সংখ্যার দিক দিয়ে এমনিতেই গুরুত্ব কমে গিয়েছে। তবু ইয়েচুরির উপস্থিতির জন্য যেটুকু প্রাসঙ্গিকতা আছে, সেটুকুও হারাতে চাইছেন। একটার পর একটা হঠকারি সিদ্ধান্ত দলকে কোথায় এনে দাঁড় করাচ্ছে, সেই আত্মসমীক্ষা আর কবে করবেন?