নন্দ ঘোষের কড়চা
রোজ নাকি শীতলতম দিন। আরে বাবা, একটা বছরে কটা শীতলতম দিন হয়? অথচ, দার্জিলিংয়ের তাপমাত্রা কত, জিজ্ঞেস করুন। আবহাওয়া দপ্তরই জানে না। এই নিয়ে আবহাওয়া অফিসকে একহাত নিলেন স্বনামধন্য নন্দ ঘোষ।
সেই কোনকাল আগে এক কবি লিখেছিলেন— শীতকাল কবে আসবে, সুপর্ণা? আচ্ছা, সুপর্ণা কি আবহাওয়া দপ্তরে কাজ করে? তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করার কী মানে হয়? আর শীত এলেই বা কী করবেন? সেই কবি লেপ ঢাকা নিয়ে নাকি ঘুমিয়ে থাকবেন। আদিখ্যেতার আর শেষ নেই। ঘুমোনোর জন্য শীতকাল কী দরকার? এক দুটো অ্যালজোলাম খেয়ে ফেললেই হয়।
সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে। বলা ভাল, সেই আদিখ্যেতা সমানে চলেছে। বাঙালির শীত এলেও জ্বালা, না এলেও জ্বালা। দুর্গা পুজোর পর থেকেই হাপিত্যেস, কবে শীত আসবে, কবে শীত আসবে। যেন শীত এলেই সব বিশ্বজয়ে বেরিয়ে পড়বে। আবার শীত এলেও শান্তি নেই। নিজেদের শান্তি তো নেই, চিড়িয়াখানার জন্তুগুলোকেও শান্তিতে থাকতে দেয় না। স্বজাতিকে দেখার এত আগ্রহ, শীতকাল না এলে বোঝাই যায় না।
ওই আলিপুরেই আরও একটি আজব জায়গা আছে, আবহাওয়া অফিস।সেও আরেক চিড়িয়াখানা। ভুলভাল পরিসংখ্যান দেওয়ায় এদের জুড়ি নেই। রোজই নাকি শীতলতম দিন। পরপর চার–পাঁচদিনের কাগজ খুলুন। একদিনের সঙ্গে আরেকদিনের কোনও মিল খুঁজে পাবেন না। আরে বাবা, একটা বছরে ছ রকম শীতলতম দিন হয় কী করে? সোমবারও শীতলতম দিন, মঙ্গলবার নতুন কিছু বলতে হবে। বলা হল, দুপুর বারোটাও আগে এমন ঠান্ডা শেষ সতেরো বছরে নাকি পড়েনি। বুধবার হয়ত বলা হবে, সন্ধে সাতটা থেকে রাত সাড়ে আটটার মধ্যে এমন ঠান্ডা শেষ পড়েছিল ৩৯ বছর আগে।আগে শুনতাম মৌসুমী বায়ু। এই জ্বালায় লোকে মৌসুমী নাম রাখাই ছেড়ে দিল। এখন পশ্চিমি ঝঞ্ঝা, আইলা, যাইলা নতুন নতুন নাম দিয়ে বাজার গরম করার চেষ্টা। আর কাগজগুলোও হয়েছে তেমনি। এইসব ঢপের চপ–কে বিশ্বাস করে ছাই পাঁশ গুলতানি দিয়ে যাচ্ছে।
এবার আসি সেই মোক্ষম প্রশ্নে। আচ্ছা বলুন তো, দার্জিলিংয়ের তাপমাত্রা কত? গত কয়েকদিনে এই নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য দেখেছেন? এত জায়গার তাপমাত্রা ছাপা হয়, অথচ যেখানে সত্যিই শীতলতম হওয়ার কথা, সেই দার্জিলিংয়ের তাপমাত্রাই নেই? আসলে সেখানে আবহাওয়া অফিসটাই নেই। হাওয়া অফিসটাই কিনা হাওয়া হয়ে গেল! শেষ কবে খোলা হয়েছে, কেউ জানেও না। তাহলেই বুঝুন, যেখানে থাকা দরকার, সেখানেই অফিস উঠে গেছে। আর আলিপুরে বসে বাবুরা শীতলতম–অর্ধ শীতলতম–সিকি শীতলতম বাতেলা ঝেড়ে যাচ্ছেন। আর আদিখ্যেতা–প্রবণ বাঙালিও নেচে চলেছে। দার্জিলিংয়ে তাপমাত্রা কত, এই প্রশ্নটাই কারও মাথায় এল না!
(নন্দ ঘোষের কড়চা। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় একটি বিভাগ। মাঝে মাঝেই নন্দ ঘোষের আবির্ভাব হয়। তিনি তাঁর মতো করেই নানা লোকের ‘সুখ্যাতি’ করেন। এটিকে নিছক মজার কলাম হিসেবেই দেখুন। )