রক্তিম মিত্র
পঞ্চায়েতে ঠিক কারা জিতল? এই প্রশ্নটার উত্তর কারও কাছেই অজানা নয়। সব জেলাতেই জয়জয়কার শাসক দলের। শুরু হয়েছে সেই মনোনয়ন পর্ব থেকে। সেটাই ছিল প্রথম দফার ভোট। প্রায় অধিকাংশ ব্লকেই লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে রইল ‘উন্নয়ন’। কেউ কেউ সন্ত্রাসকে যতই ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলুন, আসলে এই ভোটে কোথাও কোথাও যেটুকু শান্তি ছিল, সেটাই বোধ হয বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সার্বিক সন্ত্রাস কাকে বলে, এই প্রথম দেখল বাংলা।
মনোনয়ন ছিল প্রথম দফা। সেখানে বিরাট জয় লেঠেল বাহিনীর। দ্বিতীয় পর্ব ছিল মনোনয়ন তোলানো। যেখানে যেভাবে সম্ভব। কাউকে চাপ দিয়ে, কাউকে ভয় দেখিয়ে, কাউকে টাকা দিয়ে। আবার কোথাও কোথাও পরিবারের লোককে, এমনকি প্রার্থীকেও অপহরণ করে। যথারীতি এক্ষেত্রেও পুলিশ নির্লজ্জ দর্শক। উল্টে কেউ অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁকেই ধরে থানায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও বিরাট জয় লেঠেল বাহিনীর।
মনোনয়ন তোলার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর শুরু হল অন্য খেলা। আর তোলানো যাবে না। অতএব, তৃণমূলের পতাকা ধরিয়ে দাও। তাঁকে তৃণমূলের মিছিলে হাঁটিয়ে দাও। এখানেও বড় জয় সেই লাঠি আর বন্দুকের।
চতুর্থ দফা। অর্থাৎ ভোটের দিন। সেখানে বোমা, বন্দুক, লাঠির চূড়ান্ত ব্যবহার। বিস্তারিত ব্যাখ্যার কোনও দরকার নেই। টিভিতে সবাই দেখেছেন। এখানেও লাঠি–বন্দুকের জয়। বিরাট জয়।
গণনা। এক্ষেত্রে কী হবে, জানাই ছিল। যেটুকু ছাপ্পা পর্ব বাকি ছিল, তা এই পর্যায়ে এসে দেখা গেল। বিরোধীদের ভোট পড়লে, তাতে আরও একটা ছাপ মেরে ব্যালট নষ্ট করে দাও। হ্যাঁ, পুলিশের সামনেই। এখানে বড় জয় লেঠেল আর বন্দুক বাহিনীর।
তাহলে হারলটা কে?
বিরোধীরা?
মোটেই না।
এমন একটা ভোট যেখানে শাসকের ‘উন্নয়ন’ আসলে হুমকির প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়াল।
এমন একটা ভোট, যেখানে উন্নয়নের উপর কোনও জেলায়, কোনও ব্লকে, কোনও অঞ্চলে তৃণমূল কর্মীরা আস্থা রাখতে পারলেন না।
যিনি ‘অনুপ্রেরণা’র ভাণ্ডার নিয়ে বসে আছেন, তিনি যতই কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, চাল, সাইকেলের ফিরিস্তি দিয়ে যান, বোঝা গেল, দলের লোকেরাই তাতে বিশ্বাস করছে না।
তাহলে হারল কে?
উন্নয়ন।
পাড়ায় পাড়ায় তৃণমূল নেতারা যে নেত্রীর ‘উন্নয়ন’ এ এমন গণহারে অনাস্থা দেখাবেন, কেউ ভাবতেও পারেনি।