দিব্যেন্দু দে
১৯৫৪। হাঙ্গেরির টিম তখন বিশ্বত্রাস। নেতৃত্বে পুসকাস। ভালোবেসে সবাই যাকে ডাকত গ্যালপিং মেজর বলে। সেই বছর বিশ্বকাপে তারা ব্রাজিলকে হারিয়েছে ৪-২ গোলে। পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়েছে ৮-৩। ফাইনালে সেই জার্মানির মুখোমুখি হাঙ্গেরি বাহিনী। সবাই নিশ্চিত দানিয়ুব নদীর তিরেই যাবে এবারের বিশ্বকাপ। টানা ৩২ ম্যাচ তারা অপরাজিত। কিন্তু না। খেলা শেষ হওয়ার ৬ মিনিট আগে গোল করে জিতে গেল জার্মান দল। পুসকাসের গোল অফ সাইডের জন্য বাতিল হল। ১৯৭৪। ক্রুয়েফের নেদারল্যান্ডের জাদুতে মুগ্ধ। উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, পূর্ব জার্মানি সবাইকে থেঁতো করে তারা ফাইনালে। সামনে পশ্চিম জার্মানি। ফাইনালেও প্রথম গোল যখন করল, জার্মানির একজনও তখন পায়ে বল ঠেকাতে পারেনি। কিন্তু তারপরেও নাচতে নাচতে কাপ নিয়ে চলে গেল বেকেনবাওয়ারের দল।
১৯৯০। মেক্সিকোর মারাদোনা জাদু তখনও অমলিন। গোটা আর্জেন্টিনাকে টানছে একা মারাদোনা। তাঁর বিষাক্ত থ্রু থেকে ক্যানিজিয়ার গোল। গোলের নীচে দুর্ভেদ্য গায়কোচিয়া। একে একে ছিটকে গেছে ব্রাজিল। আয়োজক ইতালি। এবার সামনে পশ্চিম জার্মানি। কিন্তু আর্জেন্টিনার দুজনকে লাল কার্ড দেখানো হল। ৮৫ মিনিতে পেনাল্টি থেকে গোল করে জিতে গেল জার্মানি।
এবার ২০১৪। ব্রাজিলকে ৭-১ হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে জার্মানি। কিন্তু সামনে আছে মেসির আর্জেন্টিনা। তৃতীয় বিশ্বের হয়ে, বাঙালির হয়ে বদলা নেবেই মেসিই। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের ১১৩ মিনিটে গোল করে গেল কোথাকার কে এক গোৎসে। জীবনে যার নাম শুনিনি, তার কাছে নতজানু হতে হল সর্বকালের অন্যতম সেরা মেসিকে।
১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০, ২০১৪, পুসকাস, ক্রুয়েফ, মারাদোনা, মেসি। ঘাতকের নাম জার্মানি। ১৯৮৬-তেও তারা প্রায় অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছিল। অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া গেছে। এত দেশ যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয় জার্মানি হয় না। ইতালি, নেদারল্যান্ড বিশ্বকাপে নেই। আর্জেন্টিনা কোনও রকমে কোয়ালিফাই করেছে। কিন্তু জার্মানি ভাল তবিয়তে আছে। কখন কার মাথা কাটবে কে জানে।
চার চারটে বিশ্বকাপ। তবু তাদের জয়ে কেউ উদবাহু হয়ে নাচে না। তাদের লড়াকু, হার না মানসিকতাকে লোকে ভয় পায়। কারণ তাদের জয়ের পথে ছড়িয়ে থাকে শিল্পীর রক্ত। ভেঙে যায় ফুটবল-শিল্পের অনুরাগীদের মন।
কাপ শুধু কাপ। জার্মানি তোমার মন নেই।
(বেঙ্গল টাইমসও মেতে উঠেছে বিশ্বকাপে। তবে, একেবারেই অন্য আঙ্গিকে। আমাদের শৈশব–কৈশোরের সঙ্গে, আমাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছে বিশ্বকাপ। সেই সব মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখাই উঠে আসছে বেঙ্গল টাইমসে। হয়ত অনেক স্মৃতি, অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে আপনার সঙ্গেও। চাইলে, মেলে ধরতে পারেন। এই বিশ্বকাপ আবহে ফিরে দেখতে পারেন ফেলে আসা সেই দিনগুলোকে।)