সরল বিশ্বাস
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নাকি বিস্মিত। এত আসনে বিনা লড়াইয়ে জয় হল কীভাবে! নির্বাচন কমিশনের কাজ নিয়েও বিচারপতি নাকি ক্ষোভ জানিয়েছেন।
আমি আইনজ্ঞ নই। নিতান্তই একজন সাধারণ মানুষ। যে এবার ভোট দিতে পারেনি, কারণ তার এলাকায় বিরোধী দলের কাউকে প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি। শুধু আমি নই, এই রাজ্যের পঞ্চায়েত এলাকার অর্ধেকের বেশি ভোটার ভোটদান থেকে বঞ্চিত।
পরিসংখ্যানই বলছে, ৩৪ শতাংশ আসনে ভোট হয়নি। তার মানে, ওইসব এলাকায় প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোটার বাস করেন। যাঁরা আমার মতোই ভোট দিতে পারেননি। আর যেসব জায়গায় ভোট হয়েছে, সেখানে ভোটের চেহারা কেমন ছিল, তাও সারা বাংলা জানে। এমন একটি ব্লকও ছিল না যেখানে ছাপ্পা হয়নি। না, এটাকে আর বিক্ষিপ্ত বলার কোনও জায়গা নেই। যাঁরা বিক্ষিপ্ত অশান্তি বলছেন, তাঁরা একেবারেই মেরুদণ্ডহীন ও চাটুকার। বরং বলা যায়, কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এবং যা যা সন্ত্রাস হয়েছে, প্রশাসনের পূর্ণ মদতেই হয়েছে।
কিন্তু এমন ঘটনা ঘটল কেন? কারণ, আদালতও এই সন্ত্রাসের দার্শনিক প্রশ্রয়দাতা ছিল। পুলিশে জানিয়ে কাজ হবে না, এটা সবাই জানেন। নির্বাচন কমিশন যে শাসক দলেরই আরেকটি রাবার স্ট্যাম্প এই সত্যিটা নিয়েও কোনও দ্বিমত নেই। মিডিয়াও অনেক ক্ষেত্রে সাহস করে সত্যি কথা লিখতে পারেনি। কারণ, বিজ্ঞাপন ও নানা সরকারি আনুকূল্য বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে, শেষ ভরসা কোথায়? সেই আদালত।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আদালতের ভূমিকাও যথার্থ ছিল না। তাঁরা যেন সবকিছু জেনেও কোনও কিছুই জানেন না। সব কিছু দেখেও কোনও কিছুই দেখেন না। রায়ের নামে যুক্তিহীন, অবাস্তব কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোট জিনিসটা আসলে কী, সেই ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে যা হয়! কত আসনে ভোট হয়নি, এই সংখ্যাটা তো ভোটের অনেক আগেই পরিষ্কার ছিল। মামলা যখন সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল, তখনই বিচারপতিরা জানতেন। তখনই হেস্তনেস্ত করা যেত। তার বদলে তাঁরা রায় দিলেন, বিনা লড়াইয়ে যেগুলোতে জয় এসেছে, সেগুলো নিয়ে পরে শুনানি হবে। বাকি আসনে ভোট হোক। নির্বাচন কমিশনকে বা রাজ্যের প্রশাসনকে কড়া ভাষায় তিরষ্কার করা যেত। সেসব কিছুই দেখা গেল না। শাসক দল যা বোঝার, বুঝে গেল। নির্বাচন কমিশনও যা বোঝার বুঝে গেল। ডিএম–এসপি রাও যা বোঝার বুঝে গেলেন। বোঝা গেল, মৃদু তিরষ্কার ছাড়া আদালতের তেমন কিছুই করার নেই। এমনকী নির্বাচনে অবাধ ছাপ্পা মারলেও কিছুই হবে না। আর তাই যা হওয়ার তাই হল। নির্বাচনকে একেবারে প্রহসনে পরিণত করা হল। ভোট হওয়ার আগেই, রাত তিনটেতেও কোথাও কোথাও ভোট শেষ হয়ে গেল। যত ভোটার, তার থেকে বেশি ভোট পড়ে গেল। এমনকী গণনা কেন্দ্রেও অবাধে চলল ছাপ্পা।
আদালত যদি তখন কড়া ব্যবস্থা নিত, এই পরিস্থিতি তৈরি হত না। ভোট পেরিয়ে যাওয়ার ২ মাস পর এভাবে বিস্মিত হতে হত না। এত দিন পর বিনা লড়াইয়ের পরিসংখ্যান জেনে বিস্মিত হচ্ছেন! এটা আসলে আদালতের ব্যর্থতাই প্রমাণ করে।