নির্মল দত্ত
লোকসভার অনাস্থা বিতর্ক দেখলাম। আগেও লোকসভার অধিবেশন অনেকবার দেখেছি। এটুকু বলতে দ্বিধা নেই, বিতর্কের মান অনেকটাই নেমে গেছে। সস্তা চমক দেওয়ার প্রবণতাই যেন বেশি। না বিরোধী, না শাসক, কোনও তরফেই তেমন হোমওয়ার্ক নেই। ইন্টারনেটের জমানায় হাতের সামনেই নানা তথ্য পাওয়া যায়। তারপরেও কাউকেই তেমন তথ্যনিষ্ঠ হতে দেখলাম না। আর রসবোধেও যেন টান পড়েছে।
নয়ের দশক থেকেই টিভিতে লোকসভার অধিবেশন দেখানো হচ্ছে। তখনও বিতর্কের মান বেশ উঁচুতেই ছিল। দুপক্ষের বক্তৃতা শুনেই বেশ সমীহ জাগত। মনে হত, সংসদ অযোগ্য লোকেদের জায়গা নয়। এখানে বলতে গেলে অনেক যোগ্যতা লাগে। কিন্তু মানটা এতটাই নেমে গেছে, মনে হচ্ছে, এমন যুক্তি তো চায়ের দোকানেই শোনা যায়। বরং চায়ের দোকানে যে ছোকরাগুলো আড্ডা মারে, তাদের পড়াশোনা, তাদের যুক্তি এদের থেকে ঢের ভাল।
হইচই, হল্লাবাজি অনেকটাই বেড়ে গেছে। স্পিকার নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কেউই তাঁকে তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না। আসলে, স্পিকার উঠে দাঁড়ালে যে বসে যেতে হয়, এই ন্যূনতম সহবতটুকুও অনেকের নেই। কোনটা বলা যায়, কোনটা ঘুরিয়ে বলতে হয়, কোনটা বলা যায় না, এটাও অনেকে জানেন না। বিরোধীরা চিৎকার করবে, সেটা কিছুটা স্বাভাবিক। মুশকিলটা হল, শাসকদলও যখন হল্লাবাজিতে মেতে যায়। আর এটা তখনই হয়, যখন শাসকদলের নেতারা এই হল্লাবাজিতে উৎসাহ দেন। খোদ মন্ত্রীরা দাঁড়িয়ে চিৎকার করছেন। প্রধানমন্ত্রী একবারও তাঁদের বারণ করছেন না। একবারও তাঁদের থামাচ্ছেন না। বরং, এই সুযোগে চিৎকার করে কে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কত নম্বর বাড়িয়ে নিতে পারেন, এ যেন তার প্রতিযোগিতা চলছে।
বাইরে কোন অসহিষ্ণুতা চলছে, তা ভেতরেই বোঝা যায়। বিরোধীদের সামান্যতম সমালোচনাও হজম করতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদের কাজ আক্রমণ করা। সরকারের কাজ আত্মপক্ষের সমর্থনে যুক্তি তুলে ধরা। তার বদলে সরকারই পাল্টা আক্রমণে নেমে পড়েছে। নিজের সাফাই দেওয়ার বদলে বিরোধীরা কতটা খারাপ, সেটা তুলে ধরাই যেন প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। একেবারে কদর্যভাষায় আক্রমণ শানালেন রাহুল গান্ধীর দিকে। এমন আচরণ আর যাই হোক, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কাম্য নয়। তিনি যখন তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ করেন, তখন তাঁর এমপি–রা তো করবেনই। শাসক হতে গেলে সমালোচনা সহ্য করার মতো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা লাগে। তা অন্তত এই শাসকের নেই। আর তাই অল্পেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন। হল্লাবাজি চলছে। এই হল্লাবাজিই যেন লোকসভার ভবিতব্য।