সরল বিশ্বাস
সংখ্যা থাকলে অনেকসময় যুক্তি হারিয়ে যায়। কী রাজ্য, কী কেন্দ্র সবার ক্ষেত্রেই বোধ হয় এমনটা ঘটে। সরকার মনে করে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা যখন আছে, তখন যা চাইব, তাই হবে। বছর দুই আগে সরকার তেমনটাই ভেবেছিল।
একটা রাজ্যের তিনটে নাম হতে পারে! বাংলায় বাংলা। হিন্দিতে বঙ্গাল। ইংরাজিতে বেঙ্গল। বিধানসভা এটাই অনুমোদন করে পাঠিয়েছিল দিল্লিতে। তখনই বোঝা গিয়েছিল, এই তিনটি ভিন্ন নাম কখনই অনুমোদন পাবে না। কিন্তু আমলারা কেন বোঝেননি, কে জানে!
রাজ্যে এত এত আইএএস রয়েছেন, তাঁরা কেউ বুঝতে পারলেন না কী হতে চলেছে! কেউ বুঝতে পারলেন না, এই তিনটি নাম অনুমোদন হতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকার পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাবে, এটা বুঝলেও বলার সাহস করেননি আমলারা। আসলে, সরকার উল্টো কোনও কথা শুনতে চায় না। মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছেন, তিনটে ভাষায় তিনরকম নাম হবে। ব্যাস, আর কোনও কথা হবে না। কার ঘাড়ে কটা মাথা, ভিন্নসুর শোনাবে!
রাজ্যে কতটা ভয়ের বাতাবরণ চলছে, এই একটি ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। একজন মন্ত্রীরও মনে হল না, এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। একজন আমলারও মনে হল না, এটা বাস্তবায়িত হতে পারে না। এমনকী মূলস্রোত কাগজগুলিও বাজছে সেই একই সুরে। একটি কাগজ ছাড়া সেখানেও জোরালোভাবে বলা হল না, এটা হতে পারে না।
আজ বিধানসভায় নতুন করে বিল আনা হচ্ছে। রাজ্যের নাম হবে বাংলা। এটি নাকি মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত। মানুষের স্মৃতি বড়ই দুর্বল। ১৭ বছর আগে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় এই বিধানসভাতেই সর্বসম্মত প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল, রাজ্যের নাম হবে বাংলা। নানা কারণে সেটি ঝুলে রইল।
২০১১ তে মমতা ব্যানার্জির সরকার আসার পর বিধানসভায় অনুমোদন হল, রাজ্যের নাম ইংরাজিতেও হবে পশ্চিমবঙ্গ। অর্থাৎ, ওয়েস্ট বেঙ্গল বাদ। তারপর কী মনে হল, কী জানি! পাঁচ বছর পর তাঁর ফের মনে হল, তিন রকম নাম থাকলে ভাল হয়। তাঁর মনে হওয়া মানেই সেটা ধ্বনিভোটে গৃহীত হওয়া। সেটাই হল, তিন রকম নামের প্রস্তাব গেল দিল্লিতে।
বিধানসভায় সেদিনের কার্যবিবরণী খুলে দেখে নিন, সেদিন বামেরা কী বলেছিলেন। তাঁরা সঠিকভাবেই আশঙ্কা করেছিলেন, এইভাবে তিনটি নাম অনুমোদন পেতে পারে না। সরকারকে বারবার সতর্কও করেছিলেন। কে শোনে কার কথা! যাক, দেরিতে হলেও শুভবুদ্ধি এসেছে। স্বাগত, বাংলা। কিন্তু হঠাৎ করে মাথায় উল্টো চিন্তা আসতেই পারে। এক বছর পর হয়ত তাঁর মনে হল, বাংলাটা ঠিক হচ্ছে না, বিশ্ববাংলা হলে ভাল হয়। সেদিন আবার বিধানসভায় বিল আসবে।
এমনটা যে হতেই পারে, তা অন্তত এই বেঙ্গল টাইমসে নথিবদ্ধ থাক।