রক্তিম মিত্র
যে যার মতো আসরে নেমে পড়েছেন। কেউ এই সুযোগে নেত্রীকে তুষ্ট করার কাজে নেমে পড়েছেন। কেউ এই সুযোগে পুরনো ঝাল মেটাতে নেমে পড়েছেন। যেমন আমাদের তরুণ সাংসদ ঋতব্রত। এই সুযোগে তিনি ফের কারাত বা সেলিমদের বিরুদ্ধে নেমে পড়েছেন। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অপমানে নাকি তিনি দারুণ ব্যথিত।
সোমনাথ চ্যাটার্জির কাছে কী শিখলেন ঋতব্রত? ব্যক্তিজীবনের কথা না হয় বাদ দিলাম। রাজনৈতিক জীবনে! একজন মানুষ, যাঁর সঙ্গে পার্টির এত বছরের সম্পর্ক, যাঁর বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই, শুধুমাত্র সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের জন্য যাঁকে সরে যেতে হল, তিনি কিন্তু দলের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন না।
স্বয়ং জ্যোতি বসু বলেছিলেন, লোকসভার অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ না করতে। চাইলে, সেটাকেই ঢাল করতে পারতেন। কিন্তু জ্যোতিবাবুর জীবদ্দশায় কোনও দিন সেই কথা মুখেও আনেননি। প্রবীণ নেতাকে বিড়ম্বনায় ফেলতে চাননি। টিভিতে একটা পুরনো সাক্ষাৎকারের ক্লিপিংস দেখাচ্ছিল। ২০০৮ সালের। তখনও জ্যোতিবাবু বেঁচে। পরিষ্কার বললেন, জ্যোতিবাবু কী বলেছিলেন, তা এখন বলব না। বলা উচিত হবে না। যদি কোনওদিন বই লিখি, তখন বলব। কথা রেখেছিলেন। এত ঝড়ঝাপটার মুখেও জ্যোতিবাবুর সেই পরামর্শ প্রকাশ্যে আনেননি। জ্যোতিবাবুর কথাকে নিজের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেননি। আর ঋতব্রত! সূর্যকান্ত মিশ্রর সঙ্গে কী কথা হয়েছে, তার রেকর্ড করেছিলেন। ফাঁস করবেন, হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন।
দল থেকে বহিষ্কারের আগেই পেয়েছিলেন দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব। অন্য যে কেউ হলে একে তাকে বলে বেড়াতেন। কিন্তু সোমনাথ চ্যাটার্জির মতো মানুষ তা কাউকে জানতেও দেননি। পার্টি তাঁকে রাষ্ট্রপতি হতে দিল না, এসব বলে কোনও সহানুভূতি আদায় করতে চাননি। এমনকী, বহিষ্কারের পরেও এসব কথা সামনে আনেননি। আর আমাদের তরুণ সাংসদ! গণশক্তিতে দুদিন নাম ছাপা হয়নি বলে কত গোঁসা!
বহিষ্কারের পর কত লোভনীয় প্রস্তাবই না এসেছে! কেউ চেয়েছেন, তিনি রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হোন। কেউ চেয়েছেন, তিনি কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল হোন। কখনও প্রস্তাব এসেছে রাষ্ট্রদূত হওয়ার। তাঁকে কোনও তদ্বির করতেও হত না। শুধু একবার ‘হ্যাঁ’ বললেই হয়ে যেত। কিন্তু সব ব্যাপারে তাঁর একটাই কথা — এন ও। নো। কোনও হাতছানিতে সাড়া দেননি। যে আদর্শে বিশ্বাস করেছেন, সেই আদর্শেই সারাজীবন অটল থেকেছেন। দল বহিষ্কার করলেও কখনও দলকে হেয় করার চেষ্টা করেননি। রাজ্যের কোনও সতীর্থ সম্পর্কে কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি। অথচ, আমাদের একদা নবীন কমরেড! দলে থাকতে থাকতেই পা বাড়ালেন নানা শিবিরে। প্রথমে ঝুঁকলেন বিজেপি–র দিকে। যোগ দেওয়া প্রায পাকাই ছিল। টাইমিংয়ে একটু গণ্ডগোল। এমন এক ভিডিও সামনে চলে এল, ঝুঁকে পড়তে হল রাজ্যের শাসকের দিকে। এখন তাঁকে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে দেখা যায়, নবান্নে মিটিং করতে দেখা যায়, তাঁর জন্য আদিবাসী উন্নয়নের নতুন কমিটি তৈরি হয়। সামান্য একটা নাম না জানা কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া! রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রদূত হতে বললে না জানি কী করতেন!
জানি, অনেকে রেগে যাবেন। এমনকী বামেরাও বলে উঠবেন, কার সঙ্গে কার তুলনা! কোথায় সোমনাথ চ্যাটার্জি আর কোথায় ঋতব্রত! সত্যিই কোনও তুলনা হয় না। তবু এমন দিনেও যখন দেখি কেউ কেউ অহেতুক বালখিল্যসুলভ পোস্ট করছে, তখন সত্যিটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। এমন দিনে আলটপকা মন্তব্য না করে বরং ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। কেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়রা বহিষ্কারের পরেও এতখানি শ্রদ্ধেয় থাকেন!