এক সময় সবাই বুঝতে পারবেন, ছবিটি কারা বানিয়েছেন, কী উদ্দেশে বানিয়েছেন। তাই অযথা পাবলিসিটি দেওয়ার মানেই হয় না। কোনও প্ররোচনায় পা দেওয়া নয়। উপেক্ষাই সেরা রাস্তা। এই সার সত্যিটা দ্রুত বুঝতে পেরেছেন রাহুল গান্ধী। বোঝালেন, তিনি অন্তত প্রধানমন্ত্রীর থেকে অনেক বেশি দায়িত্বশীল। লিখেছেন রক্তিম মিত্র।।
এক ধাক্কায় অনেকটা সাবালক হয়ে গেল ভারতের গণতন্ত্র। সহিষ্ণুতা কতখানি মহার্ঘ্য হতে পারে, একটা সিদ্ধান্তে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। আর তাই, আক্রমণের তীরটা একেবারেই ভোঁতা হয়ে গেল। এর জন্য রাহুল গান্ধীকে একটা ধন্যবাদ দিতেই হবে।
দেশে একটা বিতর্কিত ছবি বেরোলেই কেউ কেউ সেটাকে অক্সিজেন দেওয়ার ঠিকে নিয়ে নেয়। কেউ পোস্টার ছেঁড়ে। কেউ হলের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। কেউ বলে, স্ক্রিনিংয়ের আগে তাদের ছবিটি দেখাতে হবে। কেউ ছবি নিষিদ্ধ করার ফতোয়া দেয়। কেউ হয়ত অভিনেতাদের কুশপুতুল পোড়ায়। মিছিল, প্রেস কনফারেন্স এগুলো তো আছেই। দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টারকে ঘিরেও এমনটা হতেই পারত। সব রাজ্যে না হোক, অন্তত যে সব রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে, সেইসব রাজ্যে হতেই পারত। সোনিয়া গান্ধী–রাহুল গান্ধীকে খুশি করার জন্য নতুন মুখ্যমন্ত্রীরা নিজেদের রাজ্যে ছবিটি নিষিদ্ধ করতেই পারতেন। প্রদর্শনে বাধা দিতে পারতেন।
কিন্তু তেমন কিছুই হল না। কারণ, রাহুল চাননি। তিনি বুঝেছেন, যত বাধা দেওয়া হবে, এই ছবিকে তত গুরুত্ব দেওয়া হবে। তাই উপেক্ষাই সেরা রাস্তা। তাছাড়া, শাসক দল নিজের নির্বাচনী প্রচারের জন্য ছবি বানানোর ইন্ধন দিতেই পারে, সেই ছবির প্রচার করে যেতেই পারে, তাতে বিরোধীরা সামিল হতে যাবেই বা কেন? ধান ভানতে শিবের গীতের মতো প্রধানমন্ত্রী একটা কথাই জানেন। কীভাবে নেহরু বা গান্ধী পরিবারকে আরও ছোট করা যায়। এই ছবিতে মনমোহন সিং কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেও আসলে দেখানো হয়েছে কীভাবে গান্ধী পরিবারের কথায় তাঁকে ওঠা–বসা করতে হয়েছে। হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী এমনটাই দেখাতে চান। এমনটাই তিনি হেঁকে হেঁকে প্রচার করে এসেছেন। তাই তাঁকে খুশি করতে এমন ছবিই বানানো হয়েছে।
এই ছবির প্রদর্শনে কংগ্রেস যদি বাধা দিত, তাহলে বিজেপি বলার সুযোগ পেয়ে যেত, বিরোধীরা মুখে সহিষ্ণুতার কথা বলে, কিন্তু তাদের মধ্যেই সহিষ্ণুতা নেই। তাছাড়া, বাধা দিলে ছবিটি আরও বেশি প্রচার পেয়ে যেত। তার থেকে উপেক্ষা করাই সেরা উপায়। ছবিটি তেমন প্রচার পাবে না। বিজেপি নিজের উদ্যোগে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে প্রচার করবে। কী জানি, প্রধানমন্ত্রী নিজের ভাষণেও ছবির বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। এতে অন্তত মানুষের কাছে পরিষ্কার হবে যে, ছবিটি কাদের উদ্যোগে বানানো হয়েছে।
তিন রাজ্যে কংগ্রেসের জয়ের চেয়েও এটাকে রাহুলের অনেক বড় সাফল্য বলে মনে করি। এক ধাক্কায় ভারতীয় গণতন্ত্রকে অনেকটা সাবালক করে দিলেন।