ময়ূখ নস্কর
রূপায়ণ ভট্টাচার্য আবার কলম ধরেছেন। সাপুড়ে ঝাঁপি খুললেই যেমন কালকেউটে, চন্দ্রবোড়া বেরিয়ে পড়ে, রূপায়ণবাবু কলম ধরলেই তেমনি একগাদা ভাটের কথা বেরিয়ে পড়ে। একজন ক্রীড়া সাংবাদিক। শুধু সাংবাদিক নন, ক্রীড়া সম্পাদক। যিনি ফুটবল নিয়ে লেখালেখি করেন। তিনি বড় মুখ করে লিখছেন, ‘অনেকদিন মাঠে যাওয়া হয় না।’ আপনাকে কে মাঠে যেতে মানা করেছিল মশাই? সোনির খেলা দেখেননি কেন? আপনি কি ভেবেছেন, মাঠে না যাওয়াটা খুব গর্বের ব্যাপার? একজন ফুটবল সাংবাদিক হয়ে মাঠে না গিয়ে কী করছিলেন? রশিদ খানের গান শুনছিলেন নাকি পিথাগোরাসের সূত্র মুখস্থ করছিলেন? নিজের মুখে বলছেন, খেলা দেখেননি। তাহলে বিনে পয়সায় জ্ঞান দিতে এসেছেন কেন?
সোনি, মর্গান নাকি মধ্যমেধার। কী এমন নতুন কথা বললি রে দাদা? মধ্যমেধার না হলে কেউ ভারতে আসে? এই যেমন আপনি। মধ্যমেধার বলেই আপনি আঞ্চলিক বাংলা কাগজে সাংবাদিকতা করেন। উচ্চ মেধার হলে ‘এই সময়’ ছেড়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়া চলে যেতেন। গৌতম ভট্টাচার্যের উচ্চমেধা। তাই তিনি ব্র্যাডম্যানের বাড়িতে গিয়ে ইন্টারভিউ নেন। আপনার কেমন খ্যামতা, মারাদোনার বাড়িতে যান তো। পিকে ব্যানার্জির বাড়িতে যেতে গেলে আপনাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে যেতে হয়।
একা রূপায়ণবাবু নন। বাংলার ফুটবল সাংবাদিকদের প্রবনতাই হল যে ডালে বসে আছি, সেই ডালটাই কাটব। কলকাতা ফুটবল নিয়ে লেখালেখি করে পেটে ভাত জোটে। অথচ, ফুটবলকে কতভাবে ছোট করা যায়, তারই চেষ্টা। খেলা ভাল হল না। অমুকের ত্রুটি। তমুকের দোষ। এ ব্যর্থ, ও ফ্লপ। সে ডাহা ফেল। কার প্ল্যান বি নেই। ওর ম্যাচরিডিং নেই। ম্যাচ ড্র হলে বলবে ঝুকিহীন খেলা। হারলে বলবে কাছা খুলে আক্রমণে যাওয়ার ফল। জিতলে বলবে, প্রতিপক্ষ দুর্বল। প্রাক্তন ফুটবলাররাও তেমন। সব সময় প্রমাণ করতে চান, এখনকার খেলোয়াড়রা ওঁচা। আর তাঁরা ছিলেন মেসি–রোনাল্ডোদের বাপ ঠাকুরদা। অথচ ক্রিকেটে দেখুন, সাংবাদিকরা সবসময় নতুন নতুন তারকা খুঁজছে। কেউ রনজিতে দুটো উইকেট পেল। বা ৯০ রান করল। অমনি তাকে মাথায় তুলে নাচতে শুরু করে দেয়। প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও সবসময় বর্তমান তারকাদের প্রশংসা করছে। টিমের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ভারত যদি বাংলাদেশকে হারায়, তাতেও তারা তুমুল প্রশংসা করবে। কিন্তু মোহনবাগান কলম্বোকে হারালে ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলতে থাকে, প্রতিপক্ষ দুর্বল ছিল।
আসলে, ক্রিকেট সাংবাদিকরা জানেন, ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়লে তাঁদেরও জনপ্রিয়তা বাড়বে। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা এই সহজ কথাটাই বোঝেন না। কলকাতার দুই ফুটবল ক্লাব শুকিয়ে গেলে রূপায়ণের বকবকানি ‘এই সময়’ থেকে ‘সেই সময়’ হয়ে যাবে।
(মিডিয়া সমাচার। বেঙ্গল টাইমসের একটি জনপ্রিয় বিভাগ। এই বিভাগে মূলত মিডিয়া জগৎকে নিয়েই আলোচনা হয়। বেঙ্গল টাইমস বিশ্বাস করে, একজন খেলোয়াড় বা অভিনেতার মতো সাংবাদিকও একজন পারফর্মার। তাই তাঁদের নিয়েও নানা আলোচনা চলতেই পারে। প্রশস্তি থাকতে পারে, নিন্দাও থাকতে পারে। এই নিয়ে পাঠকরাও নিজেদের মতামত তুলে ধরতে পারেন। মিডিয়া জগতের নানা দিক নিয়ে আপনারাও মৌলিক লেখা পাঠাতে পারেন।)